পুলিশ ভেরিফিকেশন ম্যানেজিং কমিটির কাছে দেওয়ার প্রস্তাব, মন্ত্রণালয়ের না

পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ নিজেদের কাছে রাখতে চায় না এনটিআরসিএ
পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ নিজেদের কাছে রাখতে চায় না এনটিআরসিএ  © সম্পাদিত

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএর মাধ্যমে। তবে এ কাজ নিজেদের কাছে রাখতে চায় না সংস্থাটি। পুলিশ ভেরিফিকেশনের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করার প্রস্তাব করেছে এনটিআরসিএ।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. হেলালুজ্জামান সরকার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশের কার্যক্রম গভর্নিং বডির কাছে দেওয়ার একটি প্রস্তাবনা আমরা পেয়েছি। তবে বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ‍বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলে অনিয়ম বেড়ে যেতে পারে। নিয়োগের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো নাও হতে পারে। এছাড়া পুলিশ সুপারি কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কিংবা অধ্যক্ষের পাঠানো চিঠি গুরুত্ব নাও পেতে পারে। এজন্য আপাতত এ কার্যক্রম ম্যানেজিং কমিটির কাছে দিতে চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এনটিআরসিএর প্রস্তাব নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চািশক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছেন। তারা বিষয়টি নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন। কর্মকর্তারা মনে করছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে পরবর্তীতে পুলিশ ভেরিফিকেশন যুক্ত করা হয়। এর ফলে অনিয়ম অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। 

তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলে অনিয়ম বেড়ে যেতে পারে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো নাও হতে পারে। এছাড়া পুলশ সুপার কিংবা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কিংবা অধ্যক্ষের পাঠানো চিঠি গুরুত্ব নাও পেতে পারে। এজন্য আপাতত এ কার্যক্রম ম্যানেজিং কমিটির কাছে দিতে চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে অনিয়ম বেড়ে যাবে। শিক্ষকদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। এনটিআরসিএ যে প্রস্তাব করেছে সেই প্রস্তাব নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। হয়তো বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে। তবে ম্যানেজিং কমিটির হাতে ভেরিফিকেশন কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না।’

এ কর্মকর্তা আরও জানান, পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বেশ সময় লাগে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় দেরিতে হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রতিবেদন জমা দেন। তবে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে এটা করা হলে গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি কোনো গুরুত্বই দেবে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন কীভাবে সহজে সম্পন্ন করা যায় সেই বিষয়টি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না করে সার্বিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়-এ বিষয়টি অনুধাবন করে ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের (এন্ট্রি লেভেল) শূন্য পদে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন: এক কক্ষের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোচিং সেন্টারকেও হার মানায় যে স্কুল

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫ (২০০৫ সনের ১ নম্বর আইন) এর মাধ্যমে ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। উক্ত আইনের ১০নং ধারায় এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত আইনের ধারা ২১ এর আলোকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। 

বিধিমালার মাধ্যমে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন করে এবং প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে। উক্ত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। 

২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখের ৩৭.০০.০০০০.০৭১.০৮.০০৮.০৫ (অংশ)-১০৮১ নম্বর পরিপত্র জারি করা হয়। উক্ত পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের (যেমন: প্রভাষক, সহকারী শিক্ষক, প্রদর্শক, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, সহকারী মৌলভী- ইত্যাদি) শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য অর্থাৎ নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এনটিআরসিএ-এর সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। সুপারিশ পাওয়ার পর যোগদান করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন শিক্ষকরা। যোগদানপত্র আটকে রাখার মাধ্যমে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন ম্যানেজিং কমিটির হাতে দিলে এ ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence