এক কক্ষের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোচিং সেন্টারকেও হার মানায় যে স্কুল

একসঙ্গে এক কক্ষে চলছে তিন শ্রেণির ক্লাস-পরীক্ষা
একসঙ্গে এক কক্ষে চলছে তিন শ্রেণির ক্লাস-পরীক্ষা  © টিডিসি ফটো

বেঞ্চ ৯টি, শিক্ষক চারজন, শিক্ষার্থী ২০ জন। ৪৫০ স্কয়ার ফিটের টিনশেডের এক কক্ষে চলে পাঁচ শ্রেণির ক্লাস-পরীক্ষা। প্রায় একসঙ্গে চলে তিন শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। এ যেন কোচিং সেন্টারকেও হার মানায়। তবে এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কম-বেশি ছোঁয়া লাগলেও ভিন্ন চিত্র পুরান ঢাকার অতিপুরোনো প্রাথমিকের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম সরকারী মুসলিম প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পার হলেও এই বিদ্যালয়ে নেই কোনো অবকাঠামোগত সুবিধা। এক কক্ষেই বেঞ্চ ভাগাভাগি করে চলে সব শ্রেণির ক্লাস, প্রতিবছরই এই বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় জানেন বলে জানান বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুসলিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ মাত্র একটি, ছোট্ট এক রুমের এ স্কুলে চারদিকে দেয়াল এবং ওপরে রয়েছে টিনের চাল। ৪৫০ স্কয়ার ফিটের এ স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ২০ জন। এক কক্ষের ভেতরে প্রভাতি শাখায় তিনটি ও দিবা শাখায় তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে, রুমটির মধ্যে নেই কোনো পার্টিশন (বিভাজন)।

মুসলিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষার্থী পাশাপাশি বসে ক্লাস করছেন। একজনের শব্দ বা পড়া অন্যজন শুনতে পারছেন। এতে ক্লাসের মনোযোগে ঘটছে বিঘ্ন। রুমের ভেতরেই রয়েছে ছোট্ট একটি ওয়াশরুম।

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে একজন, প্রথম শ্রেণিতে পাঁচজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঁচজন, তৃতীয় শ্রেণিতে চারজন, চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী রয়েছে।

চলতি বছরে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, আর বিদ্যালয় থেকে এ বছর চলে যায় ১০ জন শিক্ষার্থী। তবে প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে বলে জানান বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। 

আর ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৮, ১২০, ১২৩, ৯০ ও ৬৭ জন। প্রতিবছরই কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, নেমে এসেছে তলানীতে। 

আরও পড়ুন: ভবনের নিচে সরকারি স্কুল, ওপরে সরকারি কলেজ— ‘পরাধীন’ এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গল্প

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় অর্ধ-কিলোমিটারের ভেতরে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো-দক্ষিণ মুহসেন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার্থী প্রায় ৩৫০ জন; হাজী গোলাম মাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০০; ভজহরি সাহা স্ট্রীট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০১ জন ও ওয়ারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। 

এদিকে মুসলিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয়, আর বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে সরকারীকরণ হয় বলে জানা গেছে।

বেঞ্চ ভাগাভাগি করে এক রুমে চলে সব শ্রেণির ক্লাস

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজাহার হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এক কক্ষেই শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। সকালের শিফটে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু), প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। আর ডে-শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলে।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে স্কুলে বিয়ে-সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক নেতারা

তিনি বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমি একাই ক্লাস নিতাম। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী একেক সরকারি স্কুল থেকে একেকজন শিক্ষক এসে ক্লাস নিতেন। ফেব্রুয়ারি বা মার্চের দিকে নতুন তিনজন শিক্ষক এ স্কুলে যোগদান করেন, এতে শিক্ষক সংকট কেটে যায়। তবে যে শিক্ষার্থীগুলো অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারে না, তারাই এ স্কুলে ভর্তি হয়। আবার অন্য স্কুলে সুযোগ পেলে চলেও যায়।

তিনি আরও বলেন, এক রুমে দুই শিফটেই তিন শ্রেণির ক্লাস নিতে হয়। একসাথে ক্লাস নেওয়ার ফলে বাচ্চারাও মনোযোগী হতে পারে না। অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার ফলে অভিভাবকরাও এ স্কুলে সন্তান ভর্তি করাতে চান না। 

এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানা শিক্ষা অফিসার মির্জা নুরুন নাহার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ স্কুলটি পার্শ্ববর্তী স্কুল দক্ষিণ মুহসেন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংযুক্ত করা হবে। তবে কবে যুক্ত হবে তা জানেন না বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence