ঈদে মেয়ের কাছে ফিরবেন বলে রওনা, রাতেই ফিরলেন লাশ হয়ে

লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত রিনার বাড়িতে শোকের মাতম, ইনসেটে রিনা
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত রিনার বাড়িতে শোকের মাতম, ইনসেটে রিনা  © টিডিসি

মেঘনা নদীতে ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় ভোলার লালমোহন উপজেলার নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী রিনা বেগম (৩৫)। মেয়েকে রোজার ঈদের আগে ফিরে আসার আশ্বাস দিয়ে ঘর ছাড়লেও, সেই তিনি ফিরলেন নিথর দেহ হয়ে।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ঢাকাগামী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজন যাত্রী নিহত হন এবং অন্তত ১৫ জন আহত হন।

নিহত রিনা বেগম লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামের লাল মিয়া গাজি বাড়ির বাসিন্দা। তার স্বামী মো. হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সংসারের স্বচ্ছলতার আশায় প্রায় ৭-৮ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমান রিনা। তাদের একমাত্র কন্যা সাথী (৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী) দাদা-দাদির কাছে গ্রামেই থাকত।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা-মা একসঙ্গে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কচুয়াখালী ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন। যাওয়ার সময় রিনা বেগম মেয়েকে বলেন, রোজার ঈদে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু গভীর রাতে আসে সেই নির্মম খবর—মা আর নেই। খবর শুনে কচুয়াখালী মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী সাথী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় তার বাবাও গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরও পড়ুন: এখনও সন্ধান নেই ছেলের লাশের, হাদি হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে শহীদ সোহেল রানার মা

এ দুর্ঘটনায় আরও নিহত হয়েছেন লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামের রাজমিস্ত্রি আব্দুল গণি (সেরাজল বেপারীর ছেলে) ও একই এলাকার কৃষক সাজু (কালু খাঁর ছেলে)। নিহত গণির বাড়িতে স্ত্রী লাইজু বেগম ও তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে চলছে হৃদয়বিদারক আহাজারি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুল গণি দীর্ঘদিন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ১০ দিন আগে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার দেউলা ঘাট দিয়ে একই এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে লঞ্চে ওঠেন। রাতে সবাই একসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্ঘটনায় গণি ও সাজু নিহত হন। তাদের সঙ্গে থাকা মিলন ও শাহাদাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত সাজু ঢাকায় একজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!