স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন হানিফ, লঞ্চ দুর্ঘটনায় থেমে গেল জীবন

স্বামী হারানোর শোকে কাতর রহিমা বেগম
স্বামী হারানোর শোকে কাতর রহিমা বেগম  © টিডিসি

স্ত্রীর চিকিৎসার আশায় ঢাকায় যাওয়ার পথে মেঘনা নদীতে ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন হতদরিদ্র জেলে মো. হানিফ মাঝি। নদীর সঙ্গে আজীবন সংগ্রাম করে সংসার চালানো মানুষটির জীবনের শেষ যাত্রাও থেমে গেল নদীর বুকেই।

নিহত হানিফ মাঝি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মো. গেদু শনির ছেলে এবং চার সন্তানের জনক। তার মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি অসহায় পরিবারের ভবিষ্যৎ ভেঙে পড়ার করুণ কাহিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হানিফ মাঝির স্ত্রী রহিমা বেগম দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ধারদেনা করে স্ত্রীকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চরফ্যাশনের ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট থেকে এম.ভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

কিন্তু সেই যাত্রা আর শেষ গন্তব্যে পৌঁছায়নি। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এম.ভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ সজোরে ধাক্কা দেয় জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চে। সংঘর্ষে লঞ্চটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং মুহূর্তেই যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী নদীতে পড়ে যান। দুর্ঘটনার পর অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরবর্তীতে ভাসমান জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চ থেকে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে এম.ভি কর্ণফুলী-৯ লঞ্চে তোলা হয়। ঢাকা সদরঘাটে নেওয়ার পথে গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফ মাঝির মৃত্যু হয়।

এই মর্মান্তিক খবর ফরিদাবাদ গ্রামে পৌঁছালে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের সামনে বসে কাঁদছে তার সন্তানরা। মেয়ে আকলিমা ও ছেলে শামিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। বাবাই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। প্রথমে শুনলাম বাবা আহত, কিছুক্ষণ পর খবর এলো বাবা আর নেই। আমরা এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নিহতের ভাই আক্তার বলেন, চিকিৎসার আশায় যাত্রা করা মানুষটি শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ফিরলেন। এটি শুধু দুইটি লঞ্চের সংঘর্ষ নয়, এটি একটি গরিব জেলে পরিবারের জীবনের সঙ্গে নির্মম নিয়তির সংঘর্ষ। আমরা দায়ীদের বিচার ও পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় আহাম্মদপুর ইউনিয়নের হানিফ নামের একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং নিহতের পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!