রাজমিস্ত্রীর কাজ করেও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫, উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বুলু
- জুয়েল রানা, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০১ PM , আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৬ PM
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে এবারের আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সালমান ফারসী বুলু নামের এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। তার এমন সাফল্যে আনন্দতি পরিবারসহ স্থানীয়রা। তবে পরিবারে অভাব অনটন থাকায় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিতায় দিন কাটছে পরিবারটির। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী-দুলালী দম্পত্তির ছোট সন্তান সালমান ফারসী বুলু।
এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। মাত্র ৮ শতক জমিতে বসবাস তাদের। দিনমজুরের কাজ করে চলে সংসার। এবারে স্থানীয় ‘শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্ররাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থী সালমান ফারসী বুলু জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বুঝতে পারি এসএসসিতে ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে না পারলে পড়াশুনাটাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি পরিবারে অর্থ সংকটের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কায়িক শ্রমের কাজে লেগে পরেছে। তারা আর পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারেনি। এজন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য বাইরে কাজ করতে যাই। তারপর টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি।
তিনি আরও জানান, তবে শিক্ষকগণ আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এতদূর এগোতে পারতাম না। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। যদিও আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ঝুঁকি থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
আরও পড়ুন : স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান
সালমানের মা দুলালী বেগম বলেন, সবাই বলছিল ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন আরো পড়াতে হবে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিলেন। আমাদের কোনো টাকা নাই, তাকে কোচিং এ ভর্তির জন্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরকার। এই অবস্থায় বাড়িতে একটা খড়ের গাদা ছিল, সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।
সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত আমি পড়াশোনা করতে পেরেছি। সালমান ফারসী খুব মেধাবী। আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। আমার ছোট ভাই যাতে পড়াশোনা করতে পারে সে ব্যাপারে যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। তবে সামর্থ্যবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, আমার বয়স হয়েছে তাই কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন আপনারা সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্ররাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, গত বছর আমাদের মাদরাসা থেকে সালমান ফারসী বুলু এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার এইচএসসি আলিম পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবারসহ প্রতিবেশীদের। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। মেধাবী এই ছেলেটির স্বপ্ন পূরণে সরকারসহ বৃত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। মুঠোফোন : ০১৭৯৮৯২২৯৯৬ (শিক্ষার্থী সালমান ফারসী বুলু)