শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া © সংগৃহীত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ইউ এইচ রুহিনা জেসমিনের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার তুলনা করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে অধ্যাপক রুহিনা জেসমিন লেখেন, ‘পুরুষশাসিত সমাজে এই দুই নারীর ক্ষমতায়ন আমাদেরকে এতদূর এগিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে-এ বিষয়ে সন্দেহের সুযোগ নেই। পুতুল থেকে বেগম খালেদা জিয়া এবং হাসু থেকে শেখ হাসিনা হওয়ার যে দুর্গম যাত্রা তারা পাড়ি দিয়েছেন, তা জাতিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিতে শক্তিশালী নারী নেতৃত্ব প্রয়োজন।’
অধ্যাপক রুহিনা জেসমিনের এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার শাসনামলের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে এ ধরনের তুলনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ জায়েদ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘একজন স্বীকৃত খুনি ও পলাতক আর একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক—এই দুজনকে একই কাতারে দাঁড় করানো ইতিহাস বিকৃতি।’
মো. তামিম হাসান বলেন, ‘নারী নেতৃত্বের আরও বহু উদাহরণ আছে। শেখ হাসিনা কোনোভাবেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনীয় নন।’
আরিফ খান মন্তব্য করেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করে হাসিনাকে জাতে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা এটি।’
তালহা জুবায়ের নামের আরেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তোলেন, ‘এত মানুষের মৃত্যু কি সফলতার মানদণ্ড? হাসু থেকে শেখ হাসিনা—এই যাত্রাকে আপনি সফল বলেন কীভাবে?’
মো. হৃদয় আলী লেখেন, ‘স্বৈরাচার, গুম ও হত্যার সঙ্গে যুক্ত ক্ষমতাকে কীভাবে সফল বলা যায়?’
মো. মারুফ মোল্লা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘গত দেড় দশকে সংঘটিত গুম-খুনের অভিযোগ উপেক্ষা করে একজন রাজনৈতিক নেত্রীকে সফল নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা লজ্জাজনক। একজন খুনি আর একজন দেশপ্রেমিক নেত্রীকে একই প্যারামিটারে তুলনা করা ইতিহাসের সঙ্গে প্রতারণা।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খুলনার সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে অধ্যাপক রুহিনা জেসমিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন—এ বিষয়টিও গুঞ্জন উঠেছে।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এমন রাজনৈতিক বক্তব্য শিক্ষাঙ্গনের নিরপেক্ষতা ও শিক্ষকতার নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।