কুবি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৩ AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে তার 'ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি' নামক ছাত্রী নিবাসের এক আবাসিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
গত ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি উড়োচিঠি মেইল করে ছাত্রীটি এই অভিযোগ জানান।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকৌশলী লতিফের বাড়িতে ভাড়া থাকছেন। এই সুযোগে তিনি কখনো কটু কথা, কখনো বডি শেমিং, আবার কখনো অশালীন ভাষায় অপমান করে আসছেন। ছাত্রীটির ভাষ্য, 'ভাড়া দিতে দেরি করায় তিনি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে রুমে এসে অশ্রাব্য ভাষায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এই এলাকায় এই ভার্সিটি আমরা চালাই, কাকে বিচার দেব?'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রকৌশলী লতিফ ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে বাহ্যিক ধার্মিকতার ছাপ দেখালেও ছাত্রীনিবাসে মেয়েদের প্রতি তার কুনজর ও অসদাচরণ কমেনি। একই মেসে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্রী অতীতেও তার এমন আচরণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু ভয় বা বিব্রতবোধের কারণে কেউ প্রকাশ্যে বলতে সাহস পাননি।
অভিযোগপত্রে ছাত্রীটি আরও দাবি করেন, অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সময় মেয়েদের আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছেন এবং মেস থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, 'আমার মেসে থাকলে আন্দোলন করতে পারবে না; নইলে আওয়ামী লীগের লোকজন মেস ভাঙচুর করবে।'
এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রীটি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে লিখেছেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ছাত্রী একই ব্যক্তির দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
ওই মেসের অন্তত ৩ জন নারী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, উনার এমন আচরণ আছে বিষয়টি সত্য। কিন্তু ওমরা থেকে আসার পর এমন আচরণ কিছুটা কমেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় মেয়েদেরকে মেসে থাকতে দেয়নি এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমরা একটি মেইল পেয়েছি কিন্তু সেখানে অভিযোগকারীর কোন নাম, পরিচয় কিংবা মোবাইল নাম্বার নেই। তবুও আমরা এই অভিযোগটি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে পাঠাবো। যেহেতু বিষয়টি এক্সটার্নাল এবং বাহিরের একটি মেসের তাই আমরা এই বিষয়টি সুক্ষ্মভাবে দেখার চেষ্টা করছি।'
যৌন নির্যাতনে প্রতিরোধ সেলের পরিচালক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত অগ্রসর করার জন্য যে তথ্যগুলো প্রয়োজন সেগুলো এখানে অনুপস্থিত। আমরা অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চেষ্টা করছি।'
অভিযুক্ত প্রকৌশল তত্ত্বাবধায়ক (সিভিল) ও 'ইঞ্জিনিয়ার বাড়ির' মালিক ম. আব্দুল লতিফ বলেন, 'এ ধরনের কোনো ঘটনাই আমার মেসে ঘটেনি। কোটবাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি। প্রশাসন থেকে এখনো কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।'
পূর্বেও আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছিলো বলে জানা গিয়েছে। এবিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার স্ত্রী এখানে থাকেন না। এগুলো মিথ্যা।' এই বলে তিনি কল কেটে দেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফের স্ত্রীর উপর শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে।