ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল এক শিক্ষার্থী
- ইবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ AM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যা ইস্যুতে মানববন্ধনে দেওয়া এক শিক্ষার্থীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
গত ৯ ডিসেম্বর সাজিদ হত্যার ইস্যুতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের একটি ভিডিও ক্লিপে ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন নামের এক শিক্ষার্থী দাবি করেন, সাজিদকে হল থেকে ডেকে নিয়ে পুকুর পাড়ে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, মানববন্ধনে ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘সাজিদ আব্দুল্লাহকে হল থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরপাড়ে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৪১ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন এ হত্যার বিচারে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যদি প্রশাসন চায় যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করুক, তাহলে অবিলম্বে এই হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, বিচার না দিতে পারলে প্রশাসন আমাদেরকেও মেরে ফেলুক, বিচারহীনতা বজায় থাকলে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত।’
তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমির ফয়সাল নামে এক বলেন, ‘হল থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরপাড়ে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে— এসব অতিরঞ্জিত কথাবার্তাই সাজিদ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করি।’
আরেক শিক্ষার্থী মো. মোজাহিদ হোসেন বলেন, 'মূল তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বেই মন-মরজি বক্তব্য দেওয়া সঠিক নয়। বরং এখন এজন্যই জোর অবস্থান রাখতে হবে যে, গোয়েন্দা রিপোর্টের সাথে সাথেই যেন অপরাধী বের হয়ে আসে।'
আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আফরেসিনা ইসলাম বলেন, 'ওকে ডেকে এনে বিস্তারিত প্রকাশ করার দাবি করছি, প্রশাসনের মাধ্যমে এই ছেলের বলা ইনফরমেশনের ভিত্তিতে অপরাধীকে ধরা হোক। যদি এর সত্যতা না পায় তাহলে এই ছেলেকে ৩ দিন ৩ রাত কানে হেডফোন দিয়ে হিরো আলমের গান বাজিয়ে শাস্তির আওতায় আনা হোক।'
এ বিষয় সম্পর্কে ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিনে বুঝতে পারছি যে এই হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিত। যদি পরিকল্পনা ছাড়া একটা হত্যাকাণ্ড হতো তাহলে এতদিনে বোধহয় কোনো না কোনোভাবে আমরা ট্রেস করতে পারতাম।’
ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে সাজিদ আব্দুল্লাহ আমার হলেই থাকত, শহিদ জিয়াউর রহমান হলে। হল থেকে সে খেলতে গিয়েছিল এবং তারপর থেকেই নিখোঁজ। যেদিন সে মারা যায় সেদিনও এক-দুজন বলেছিল যে পরেরদিন সকাল বেলা তাকে দেখেছে, কেউ বলেছিল বিকেল বেলা তাকে দেখেছে। প্রশাসনের সাথে একটা কথা বলে একটু শিওর হতে পেরেছি যে বিকেল পর্যন্ত সে জিয়া হলে কিংবা জিয়া মোড়ের আশেপাশে অবস্থান করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অনুমানের যথেষ্ট শক্তপোক্ত স্তম্ভ দাঁড় করিয়ে বলতে চাই যে, এটা পরিকল্পিত তো বটেই এবং আমার কাছে মনে হয় যে এই পরিকল্পনা এভাবেই হয়েছে— হল, জিয়া মোড় কিংবা তার হলের আশেপাশের এরিয়া থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তো সেই প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করেই আমি এই কথাটা বলেছি। ইটস নট এ স্টেটমেন্ট, ইটস জাস্ট অ্যান অ্যাজামশন। অনুমান নির্ভর।’
এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘না, আমার কাছে যদি ডকুমেন্ট থাকত তাহলে তো এতদিনে তো সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকারীকে আমরা খুঁজেই পেতাম। আর খুঁজে পাচ্ছি না বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত।’
হল থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করার বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত তদন্ত কর্মকর্তা (সিআইডি) বলেন, ‘বিষয়টি আমি গতকালকে দেখেছি। আমাদের কাছে এই বিষয়টি নতুন। উক্ত শিক্ষার্থীর কাছে যদি এরকম কোন তথ্য থাকে তাহলে তো সেটা আমাদের তদন্তের জন্য সহায়ক হবে। আমরা তার সাথে যোগাযোগ করবো।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।