সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর ৭ কলেজের ১৪০০ বিসিএস ক্যাডারের ভবিষ্যৎ কী?

শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষক   © টিডিসি সম্পাদিত

চলতি বছরের ২৬ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করার। তবে এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি হয়নি। যদি আগামীতে এ অধ্যাদেশ জারি হয়, তাহলে কলেজগুলোতে বর্তমানে কর্মরত প্রায় এক হাজার ৪০০ বিসিএস ক্যাডারের বিভিন্ন পদমর্যাদার শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কী হবে—তাদের বর্তমান পদে রাখবে কিনা সরকার, নাকি অন্য কোনো রূপান্তরের পথে পাঠানো হবে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও পরিকল্পনা। 

জানা গেছে, কলেজগুলোর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এখানে প্রায় প্রত্যেক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ২৫টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। সরকারি এই সাত কলেজে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন শিক্ষক, এক হাজার ১০০ জন কর্মচারী কর্মরত এবং প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। 

যেই পদ্ধতিতে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের কথা ভাবছে সেটি ক্রটিপূর্ণ। তাই সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এসব কলেজের অবজেকটিভ মূলত টিচিং, গবেষণা নয়। তাই লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি কিংবা দেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বাহিরের কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারেমোহাম্মদ মজিবুর রহমান, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।

সাত কলেজের শিক্ষকরা বলছেন, বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে ১০ বছরে একটি পদও সৃষ্টি হয়নি সেখানে প্রায় এক হাজার ৪০০ পদ বিলুপ্তি হলে সরকারের জন্য তথা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার-এর জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি হবে যা কোনোভাবে পূরণ করা সম্ভব নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাকুরির সুযোগ সংকুচিত হবে। সাত কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পাঠদান করে। কলেজগুলোতে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সংকুচিত হলে ঢাকা শহরে নতুন করে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জায়গার সংকুলান করা বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাদেশ জারি হলে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি সরকার বিবেচনায় রাখবে। কারও পদ বিলুপ্ত করা হবে না; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় রূপান্তর বা বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে সমাধান খোঁজা হবে। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অন্তত তিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি। এই তিন জনের সবাই মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখার সঙ্গে সংযুক্ত; যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তা কলেজ শাখায় কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন আবার কলেজ শাখার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর পূর্বের কলেজের শিক্ষকরা ইউজিসির প্রদত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার শর্তাবলি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আইন অনুযায়ী অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে আবেদন করতে পারেননিড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, জবি অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের (ইউটিএল) সদস্য সচিব।

তবে অতীত বলছে ভিন্ন কথা। এর আগেও জগন্নাথ কলেজ থেকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরিত করা হয়েছিল সেই সময় সেখানে থাকা বিসিএস ক্যাডার শিক্ষককে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কলেজে বদলি করা হয়েছিল। যদিও কিছু শিক্ষক, যাদের যোগ্যতা ছিল তারা আবেদন করেছিলেন এবং কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানও করেছিলেন।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের (ইউটিএল) সদস্য সচিব ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর পূর্বের কলেজের শিক্ষকরা ইউজিসির প্রদত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার শর্তাবলি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আইন অনুযায়ী অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে আবেদন করতে পারেননি। 

‘‘তবে যাদের যোগ্যতা ছিল এমন কেউ কেউ আবেদন করেছেন এবং কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। তবে যাদের শর্ত পূরণ হয়নি তারা শিক্ষক হিসেবে জবিতে থেকে যাওয়ার জন্য ২০০৮ সালের দিকে কোর্টে মামলা করেন। শেষ পর্যন্ত ২০১১-১২ সালের দিকে মামলায় ওই শিক্ষকগণ রায় পাননি। পরে তারা সরকারি কলেজগুলোতে চলে যান। তারা আত্মীকরণের জন্য আবেদন করেছেন। মামলা হেরে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির আইন অনুযায়ী তাদের থাকার সুযোগ ছিল না।’’

 

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক আরও বলেন, এ ছাড়াও কলেজের সব শিক্ষকরা চলে গেলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যান। সবমিলিয়ে সাত কলেজ যেহেতু একটা বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, সরকার তাদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে-এটা সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন। জগন্নাথের অভিজ্ঞতটা এমন ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেই পদ্ধতিতে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের কথা ভাবছে সেটি ক্রটিপূর্ণ। তাই সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তিনি বলেন, এসব কলেজের অবজেকটিভ মূলত টিচিং, গবেষণা নয়। তাই লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি কিংবা দেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বাহিরের কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কলেজে কর্মরত (বিসিএস ক্যাডার) শিক্ষক, যাদের যোগ্যতার আছে তাদের রাখা যেতে পারে। যদি তারা থাকতে চায়। তাছাড়া বাকিদের অন্য কলেজে বদলি করা যেতে পারে। তবে তাদের চয়েজ থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে নতুন শুধু প্রভাষক নিয়োগ দিলে হবে না। দেশ-বিদেশের হাই-প্রোফাইল শিক্ষকও নিয়োগ দিতে হবে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত কলেজ করার দাবিতে ইউজিসিতে শিক্ষকদের অবস্থান

নাম প্রকাশ না করে সরকারি তিতুমীর কলেজের এক অধ্যাপক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে আমাদের পদমর্যাদা কেমন হবে, কীভাবে শিক্ষকদের সার্বিক দিক দেখা হবে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।’ অন্য একজনের ভাষ্য, সাত কলেজের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক কোনো না কোনোভাবে রাজধানীর আনুষঙ্গিক সঙ্গে সংযুক্ত। তাদের পরিবার এমনকি সন্তানরাও রাজধানীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় তাদেরকে যদি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা না হয়; তবে তারা শুধু ব্যক্তি হিসেবেই নয়, পারিবারিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক কার্যক্রম চালু আছে, সেখানে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকরা থাকবেন। তবে যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক নেই, সরকারের সেখানে রাখার বিষয়ে এখনও চিন্তাভাবনা চলছে। 

তিনি আরও বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক চালুর মাধ্যমে শিক্ষকরা তাঁদের স্বাভাবিক কর্মস্থানে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া, শিক্ষকদের দাবি সংক্রান্ত বিষয়টি আজ তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন এবং হয়তো মন্ত্রণালয় তাদের দাবিগুলো বিবেচনা করবে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। সেই হিসেবে প্রায় আট বছর ঢাবির অধীনে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম চলে সাত কলেজে। যে সংকটগুলো নিরসনে কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি, পূরণ হয়নি লক্ষ্যও। 

সাতটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence