সদ্য প্রয়াত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া © বিবিসি বাংলা
১৯৮২ সালে বিএনপির চেয়ারপার্সন পদের জন্য বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াও প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে দলের বিভক্তি এড়াতে পরবর্তীতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবদাল আহমেদ তার ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া: সংগ্রামমুখর জীবনের আলেখ্য’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন এ তথ্য।
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘একটি শোকার্ত শপথ: রাজনীতিতে খালেদা জিয়া’ অংশে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য গ্রন্থটির এ অংশটি তুলে ধরা হলো-
‘বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে ২১ জানুয়ারি ৮২। কে হবেন চেয়ারম্যান? বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব বেগম জিয়াকে অনুরোধ করলেন, দলের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াতে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে চেয়ারম্যান হিসাবে দেখতে চাচ্ছে। তরুণ নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে জিয়ার আদর্শ-বিরোধীরা বিচারপতি সাত্তারকে ঘিরে রেখেছে।
বিচারপতি সাত্তার চেয়ারম্যান হলে জিয়ার আদর্শের বিচ্যুতি ঘটবে। এ অবস্থায় তরুণ নেতৃত্বের দাবির মুখে বেগম জিয়া নির্বাচন কমিশনে চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাঁর পক্ষে ৫ জানুয়ারি রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাব করেন বিএনপি মঠবাড়িয়া (বরিশাল) থানা শাখার সভাপতি প্রবীণ নেতা শামসুল হক ও সমর্থক নগরকান্দা (ফরিদপুর) থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা।
এদিকে বিচারপতি সাত্তারও চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর ফলে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিচারপতি সাত্তার দুবার বেগম জিয়ার বাসায় যান এবং দলের বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। বেগম জিয়া তাঁকে দলের তরুণ নেতৃত্বের মনোভাবের কথা জানান। এ সময় বিচারপতি সাত্তার বেগম জিয়াকে দলের সহ-সভাপতির পদ এবং দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু বেগম জিয়া ব্যক্তিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি।
অবশেষে বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বেগম জিয়া চেয়ারম্যান পদ থেকে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। ৬ আগস্ট চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগেই তিনি প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিচারপতি সাত্তার দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বেগম জিয়া তাকে সমর্থনকারী বিএনপি নেতাদের জানান, দলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিচারপতি সাত্তারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে তিনি প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেছেন। বিচারপতি সাত্তার তাঁকে কথা দিয়েছেন, দলকে তিনি ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। তিনি আরও বলেন, দল বা কোন পদের প্রতি তাঁর কোনো লোভ নেই। তিনি চান বিএনপি যেন বিভক্ত না হয়। তাঁর এই সিদ্ধান্ত তখনই প্রশংসিত হয়েছিল।
১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া সংবাদপত্রে এক দীর্ঘ বিবৃতির মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণের তাঁর সিদ্ধান্তের কথা দেশবাসীকে জানান। ও বিবৃতিটি নিম্নরূপ: ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আতানির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে আলোচিত ৩৫ ঘটনা
এই দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য তিনি গত কয়েক বছর ধরে কি অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন তা আপনারা জানেন। বিগত ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে শাহাদতবরণের পূর্বমুহূর্তেও তার এই প্রাণপ্রিয় দলের সাংগঠনিক কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। বিগত কিছুকাল যাবৎ আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কার্যকলাপ গভীরভাবে অবলোকন করে আসছি। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দলের ভেতর বিভিন্ন বিষয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, যা দলীয় ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন করতে পারে।
দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে আমাকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন মহল রাজনীতিতে অংশ নিয়ে বিএনপির দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় সকল দিক বিবেচনা করে দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি এবং দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শহীদ জিয়ার গড়া এই দলের ঐক্য এবং সংহতি বজায় রাখা। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া।
এরই মধ্যে মহামান্য প্রেসিডেন্ট সাত্তারের সঙ্গে আমার দেশ ও দলীয় ব্যাপারে কিছু আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রণীত ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন এবং বিএনপির ঐক্য সংহতি তিনি বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। তার অনুরোধে এবং এই আশ্বাসে আমি চেয়ারম্যান প্রার্থীপদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি।
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আবেদন, তারা যেন নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে নিঃস্বার্থভাবে শহীদ জিয়ার অনুসৃত কর্মধারা ও আদর্শের ভিত্তিতে শোষণহীন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। আমি তাদের সঙ্গে সবসময় থাকবো।’