বিএনপির চেয়ারপারসন সদ্য প্রয়াত বেগম খালেদা জিয়া © বিবিসি বাংলা
চার দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিন দফায় ১০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া ক্ষমতার উত্থান-পতন, কারাবাস, শারীরিক জটিলতা ও নানা রাজনৈতিক বৈরিতার মুখোমুখী হয়েছেন। সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময়ের রেকর্ড নিচে তুলে ধরা হলো।
২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, মৃত্যু
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাকে ঢাকায় তার স্বামী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
২০২৫ সালের ২৩ নভেম্বর, হাসপাতালে ভর্তি
কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যাসহ নানা জটিলতা নিয়ে ২৩ নভেম্বর ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। বহুদিন ধরেই তিনি নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। এর আগেও তাকে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
এবার এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সর্বশেষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুইদিন আগে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন খালেদা জিয়া।
২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি, লন্ডন সফর
উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। প্রায় চার মাস পর তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন।
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট, মুক্তি
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সে সময় বঙ্গভবনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর উচ্চ আদালত তাকে দুটি মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেয়। খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের বাসভবনে থেকেছেন।

২০২৪ সালের ২৩ জুন, পেসমেকার স্থাপন
হৃদপিণ্ডে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক এবং একটা রিংও পরানো হয়েছিল। তিনি একইসাথে হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে তার লিভারের চিকিৎসাও করা হয়।
২০২১ সালের ১১ এপ্রিল, করোনায় আক্রান্ত
খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ফুসফুসে পাঁচ শতাংশ সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে ২৭ এপ্রিল তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা নিতে হয়।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ, শর্তে মুক্তি
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। শর্তগুলো ছিলো, এই সময়ে তার ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পরবর্তীতে কয়েক দফায় তার সেই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিকভাবে বন্দি অবস্থায় ছিলেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, নির্বাচনের ফল বাতিল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও পরে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিলের দাবি জানায়। যদিও খালেদা জিয়া সেই সময় দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন, কিন্তু দলের নানা কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা ছিল। বিএনপি সেই মামলা ও সাজা দেওয়ার বিষয়কে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে অভিযোগ করে আসছিল।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, কারাবাস
খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হলে তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পর্কিত দুর্নীতির দুটি মামলায় তাকে প্রথমে পাঁচ বছর, পরে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর, সবশেষ সমাবেশ
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন এবং ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান।
জনসভাটি ছিল দীর্ঘ বিরতির পর তার বড় রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন। তবে এরপর থেকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ওই জনসমাবেশের পর তাকে আর কোনো প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি, কোকোর মৃত্যু
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যান। সে সময় বিএনপির প্রেস উইং জানায়, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে হার্ট অ্যাটাকে আরাফাত রহমানের মৃত্যু হয়। তার বয়স ছিলে ৪৬ বছর। তিনি অনেকদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন।
তিন দিন পর ২৭ জানুয়ারি কোকোর মরদেহ মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নেয়া হলে সন্তানের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ চলছিল। খালেদা জিয়া ৩ জানুয়ারি থেকে তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। সে সময় ওই কার্যালয়ের সামনে বালুভর্তি ট্রাক রেখে পুলিশ তাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছিল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, নির্বাচন বর্জন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে নির্বাচনটি ছিলো আওয়ামী লীগের একতরফা, বিতর্কিত নির্বাচন। এর আগে থাকেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোট নির্বাচন ঠেকাতে অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি হরতালের ডাক দেয়। সে আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস রুপ নিয়েছিল।
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর, মার্চ ফর ডেমোক্রেসি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দেন। এদিন তিনি নয়াপল্টনে কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার জন্য গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে আর বের হতে পারেননি।
এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে গুলশানের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন এবং পুলিশদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের অফিসার কোথায়? এতক্ষণ তো অনেক কথা বলেছেন….মুখটা বন্ধ কেন এখন? পরে তার গুলশান কার্যালয়ের গেটে কয়েকটি ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। মোতায়েন করা হয় পুলিশ ও জলকামান।
২০১৩ সালের ৩ মার্চ, প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাত বাতিল
ভারতের সে সময়কার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে তার সাথে খালেদা জিয়ার সৌজন্য সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত থাকলেও হরতালের কারণে তিনি দেখা করতে যেতে পারেননি। সে সময় যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় প্রত্যাখ্যান করে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী।
২০১১ সালের ৩০ জুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদ
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর খালেদা জিয়া ও তার দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। প্রতিটি বিভাগীয় শহর অভিমুখে রোডমার্চের ডাক দেন।
২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর, বাড়ি থেকে উৎখাত
আওয়ামী লীগের শাসনে এই দিনে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল সড়কের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উৎখাত করা হয়। সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছে।
২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, গ্রেফতার
সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে সেই সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল হক রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিন আবেদন নাকচ হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে আটক রাখা হয়। সে সময় তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোও কারাবন্দি ছিলেন। প্রায় ৩৭২ দিন কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর, ক্ষমতা হস্তান্তর
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে জটিলতায় তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিজে নেতৃত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলে বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলন সহিংসতায় রুপ নেয়।
২০০৫ সাল, ফোর্বসের তালিকায়
খালেদা জিয়া তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকার জন্য মার্কিন ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯ নম্বরে স্থান পান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, গ্রেনেড হামলা
ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলার হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী। সে ঘটনায় দেশে বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অর্থাৎ তখনকার বিশ্ব নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে তখনকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।

২০০৪ সালের ২৬ মার্চ, র্যাব গঠন
বাংলাদেশে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ শেষ হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। সে সময় অপরাধ দমনের জন্য ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ র্যাব গঠন করা হয়। তবে বাহিনীটি তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে সেই বছরের জুন মাসে। এতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, তখনকার বিডিআর (এখনকার বিজিবি), পুলিশ, আনসার থেকে সদস্য নিয়োগ দেয়া হতো। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে এই বাহিনী পরবর্তীতে নানা সমালোচনার মুখে পড়ে।
২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর, অপারেশন ক্লিন হার্ট
বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছর পেরোতে না পেরোতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর মধ্যরাত, কার্যত ১৭ অক্টোবর থেকে সারাদেশে একযোগে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। যার নাম দেয়া হয় অপারেশন ক্লিনহার্ট।
টানা ৮৪দিন চলা এ অভিযানে ১২ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় যাদের আটক করে তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনের বেশি হেফাজতে মৃত্যু খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যার কারণে সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেঢার আগের দিন ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি অধ্যাদেশ ২০০৩’ জারি করা হয়।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর, নির্বাচনে জয়
দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি। খালেদা জিয়া তৃতীয় মেয়াদে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৯৯ সাল, জোট গঠন
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে চারদলীয় জোট গঠন করে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জোটবদ্ধ আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে।
১৯৯৬ সালের জুন মাস, পরাজয়
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় হয় বিএনপির। বিএনপি সংসদে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসেবে ১১৬টি আসন পায় সেই নির্বাচনে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, নির্বাচনে জয়
আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জনের মুখে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার একতরফা সংসদ নির্বাচন করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিআবার সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হন।
এ সংসদের মেয়াদ ছিল ১২ দিন,আর সরকারের মেয়াদ ছিল দুই মাসের মতো। এ সংসদেই আন্দোলনকারী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, নির্বাচনে জয়
দেশের সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর যে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, সেখানে জিতে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। তার প্রথম মেয়াদ ছিল ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: ‘আপসহীন’ খালেদা জিয়াকে আজ চিরবিদায় জানাবেন দেশের মানুষ
১৯৮৬ সাল ৭ মে, নির্বাচন বর্জন
এরশাদ সরকার পতনের আগে যে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে সেখানে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দল আন্দোলন করলেও নির্বাচন বয়কট করে নিজ অবস্থায় অটল ছিলেন খালেদা জিয়া। সে আন্দোলনে আপোসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৪ সালের অগাস্ট, দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত
বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে শীর্ষ পদে থেকে দলটিকে টানা ৪১ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
১৯৮৩ সাল মার্চ, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। সে সময় এরশাদের স্বৈরাচারের অবসান ঘটাতে সাত দলীয় জোট গঠন করেন তিনি। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনবার গ্রেফতার করা হয় তাকে।
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর, প্রথম বক্তব্য
৭ নভেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন।
১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি, রাজনীতিতে পদার্পন
সাধারণ সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীমে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর- এই তিন দফায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে, রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত
সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন খালেদা জিয়ার বয়স ছিল ৩৬ বছর।
১৯৬০ সালের আগস্ট
দিনাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তিনি নিজ নামের সাথে ‘জিয়া’ নামটি যোগ করেন।
১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট
খালেদা জিয়া ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে বিভক্তির পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তাদের আদি বাড়ি মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব জেলা ফেনীতে। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া ছিলেন তৃতীয়। তার নাম রাখা হয়েছিলে খালেদা খানম। ডাকনাম ‘পুতুল’।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।