‘তুই ভর্তি হলে জমি বিক্রি করব’—বাবার সেই মেয়ে ফুটবল দলের অধিনায়ক

মোছাঃ সুরমা জান্নাত
মোছাঃ সুরমা জান্নাত  © সংগৃহীত

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারের মেয়ে মোছাঃ সুরমা জান্নাত। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এই তরুণী সাধারণ একটি গ্রামের স্কুল থেকে শুরু করে বিকেএসপি হয়ে পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক।

মাত্র ১১ বছর বয়সে দক্ষিণ মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল খেলায় হাতে খড়ি হয় সুরমার। শুরু থেকেই তাকে শুনতে হয়েছে সমাজের কটূক্তি, আত্মীয়স্বজনের বিরূপ মন্তব্য, এমনকি পারিবারিক সংকটও মোকাবিলা করতে হয়েছে। ‘মেয়ে হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে?’ এমন কথা ছিল তার নিত্যসঙ্গী।

মায়ের শুরুতে আপত্তি থাকলেও পাশে ছিলেন সুরমার বাবা। একজন কৃষক হয়েও মেয়ের স্বপ্নপূরণে ভূমি বিক্রি করতেও পিছপা হননি তিনি। সুরমা বলেন, ‘আমার ফুটবলে আসার পেছনে সব অবদান আমার বাবার। তিনি বলেছিলেন, ‘তুই যদি ভর্তি হতে পারিস, আমি জমি বিক্রি করেও টাকা দেবো।’

২০১৭ সালে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সুরমা ভর্তি হন বিকেএসপিতে। সেখানে পেশাদার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের কোচ শরীফ মাহমুদের দিকনির্দেশনায় নিজেকে প্রস্তুত করেন প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের জন্য। বিকেএসপির হয়ে টানা তিনবার ভারতের সুব্রত কাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি।

023 (1)

২০১৯ সালে সুরমা প্রথমবারের মতো ডাক পান জাতীয় দলে। খবরটি বাবাকে জানালে আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এরপর একদিন মিটিংয়ে তাকে জানানো হয়, তিনিই হবেন দলের অধিনায়ক। ‘আমি ভাবতেও পারিনি আমাকে অধিনায়ক বানাবে, এটা অনেক বড় গর্বের বিষয়, বলেন সুরমা।

ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে। এরপর তিনি অংশ নেন দুবাইয়ে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। সেখানেই দ্বিতীয় ম্যাচে পায়ে গুরুতর আঘাত পান, দেশে ফিরে জানা যায় পায়ে রয়েছে চিড়। তবে এই চোটও তাকে থামাতে পারেনি। দৃঢ় মনোবলে তিনি মাঠে ফিরে আসেন।

সুরমা বলেন, ‘মেয়েরা যেন মানুষের বাজে কথা শুনে থেমে না যায়। অনেকেই অনেক কিছু বলবে, তাতে কান না দিয়ে খেলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’

তিনি চান, জামালপুরের ইসলামপুরে গড়ে উঠুক মেয়েদের জন্য একটি ফুটবল একাডেমি। ‘আমার মতো গ্রামের অনেক মেয়ে আছে, যারা খুব ভালো খেলে। কিন্তু আর্থিক কারণে তারা বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারে না। আমি চাই, তাদের সুযোগ দেওয়া হোক।’


সর্বশেষ সংবাদ