কাবুলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও গুলি, বিমান হামলার আশঙ্কা

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল  © মানচিত্র

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) রাত পেরিয়ে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিস্ফোরণের কারণ ও হতাহতের পরিমাণ এখনও পরিষ্কার নয়।

স্থানীয় গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে অজ্ঞাতনামা বিমান থেকে সম্ভাব্য বিমান হামলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

তালেবান অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। তিনি সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি তাদের কোনো উচ্চপর্যায়ের নেতার প্রথম ভারত সফর।

আরও পড়ুন: অভিনেতা বিজয় থালাপতির বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

ছয় দিনের এ সফর তালেবান অন্তর্বর্তী প্রশাসনের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন যে, আফগান অন্তর্বর্তী প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে ইসলামাবাদের কাছে অর্থ দাবি করেছে।

পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসিফ বলেন, আফগান অন্তর্বর্তী প্রশাসন টিটিপি-কে সমর্থন দিচ্ছে এবং তাদের নিজ দেশে আশ্রয় দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমি ডিরেক্টর জেনারেল আইএসআইকে নিয়ে কাবুলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি তাদের বলেছিলাম, টিটিপি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা ও আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করুন, তাদের আপনার ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দিন এবং তাদের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করুন।”

“তারা (আফগান কর্মকর্তারা) আমাদের বলেছিল, ১০ বিলিয়ন রুপি (প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার) দিন, আমরা তাদের স্থানান্তর করব। আমরা তাদের কাছ থেকে গ্যারান্টি চেয়েছিলাম — অর্থ পাওয়ার পর তারা আবার ফিরে আসবে না, সেই নিশ্চয়তা কীভাবে পাব? কিন্তু তারা কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি,” দাবি করেন আসিফ। তিনি আরও বলেন, ইসলামাবাদ এই দাবি মেনে নেয়নি।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাজা আসিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আনজুমের সঙ্গে কাবুল সফর করেছিলেন। নাদিম তখন পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন। ওই সফরে আসিফ কাবুলে অন্তর্বর্তী উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

খাজা আসিফ সাম্প্রতিক সময়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এখন যথেষ্ট হয়েছে। পাকিস্তান আর এসব হামলা বরদাশত করবে না।”

গত দুই দিনে ওই প্রদেশের ওরাকজাই ও ডেরা ইসমাইল খান জেলায় অন্তত ১২ জন সৈন্য, যাদের মধ্যে তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তা, নিহত হয়েছেন। অপরদিকে নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা অভিযানে ২৬ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, “আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আমরা একটি প্রতিনিধি দল কাবুলে পাঠাব। আমরা তাদের (আফগান অন্তর্বর্তী প্রশাসন) কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেব—এই ধরনের হামলা, এবং যারা এসব সন্ত্রাসীদের আশ্রয় বা সমর্থন দেয়, তাদের আমরা আর সহ্য করব না। পাকিস্তান সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর ধৈর্য এখন সীমার প্রান্তে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, কাবুল টিটিপি-কে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে পাকিস্তানে হামলা বাড়ছে।

তবে আফগানিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না—এই অঙ্গীকারে তারা অটল।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

 


সর্বশেষ সংবাদ