মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প  © ফাইল ছবি

২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বৈশ্বিক মোড়ল হিসেবে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদটি তাই অনেক বেশি ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এবারের নির্বাচনে নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কয়েকটি সমীকরণে এগিয়ে থাকার কথা জানা গেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসোসের করা জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের চেয়ে চার পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যেখানে ৪১ শতাংশ, সেখানে কমলার জনপ্রিয়তা ৪৫ শতাংশ। তবে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে কমলার চেয়ে ২ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিসাব–নিকাশও পাল্টে গেছে। বাইডেনের চেয়ে যেখানে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন, সেখানে কমলা এখন ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেন কমলা। এর পর থেকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জোরালো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে জরিপ করেছে রয়টার্স। এর আগে গত জুলাই মাসের শেষে করা রয়টার্স/ইপসোস জরিপেও কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে তখন তাঁদের মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩ পয়েন্টের। অর্থাৎ কমলা গত এক মাসে ব্যবধান আরও ১ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। নতুন জরিপ আট দিন ধরে চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রতি সমর্থন বেড়েছে।

নতুন জরিপে দেখা গেছে, নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা ৪৯ শতাংশ, যেখানে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ট্রাম্পের সঙ্গে কমলার ব্যবধার ১৩ শতাংশ। এর আগে গত জুলাইয়ে রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলা ৯ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। গত এক মাসে তিনি ৪ শতাংশ ব্যবধান বাড়িয়েছেন।

তবে কমলার চেয়ে শেতাঙ্গ ও পুরুষ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। গত জুলাই ও আগস্টের মধ্যে এ ব্যবধান খুব বেশি বাড়েনি। তবে কলেজ ডিগ্রিধারী ভোটারদের মধ্যে এ ব্যবধান ৭ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন কমলা।

বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা পরিবর্তন এসেছে, এ জরিপ থেকে সেটা উঠে এসেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের বাজে ফলের জেরে গত ২১ জুলাই সরে দাঁড়ান বাইডেন। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জরিপ ও গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর জরিপে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কমলা।

রয়টার্স/ইপসোসসহ জাতীয় জরিপগুলো থেকে ভোটারদের মতামত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী নির্ধারণে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর আগে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল।

এই রাজ্যগুলো হলো উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও নেভাদা। নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে করা জরিপে এসব অঙ্গরাজ্যে কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্প ২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এসব অঙ্গরাজ্যে ৪৫ শতাংশ আর কমলার ৪৩ শতাংশ।

এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করা রিপাবলিকান প্রচারশিবিরের কৌশলবিদ ম্যাট ওকিং বলেন, ‘জরিপে ফলাফল পরিবর্তনের বিষয়টি দেখলে এটা স্পষ্ট যে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে লড়াই করা ট্রাম্পের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং, তবে তা অপ্রতিরোধ্য নয়।’

ম্যাট আরও বলেন, এখন ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব তাঁর নির্বাচনী প্রচারে মনোযোগী হতে হবে। যাঁরা বাইডেনকে পছন্দ করেন না বলে তাঁর দিকে ঝুঁকেছিলেন, তাঁরা যেন ভয় না পান, সেটি ট্রাম্পকে দেখতে হবে। গত সপ্তাহে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর কমলা হ্যারিস দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া সফর করছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার বলেছেন, হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর তাঁরা নভেম্বরে নির্বাচনে ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন। এর আগের জরিপে বাইডেনকে ভোট দিতে উৎসাহের কথা বলেছিলেন মাত্র ৬১ শতাংশ ভোটার।

নারী ভোটারদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন শি দ্য পিপলের প্রতিষ্ঠাতা আইমি অ্যালিসন বলেন, ‘এ জরিপে আমরা দেখেছি, আগের চেয়ে অনেকেই ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন। তাঁরা কমলা হ্যারিসকে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখেন। রিপাবলিকানরা এ নির্বাচনকে শুধু ট্রাম্পের বিষয়টিকে দেখেন। ট্রাম্পকে হারানো ছাড়া জনগণকে অন্য কিছু করার সুযোগ দিলে জনগণ তাতে আরও বেশি আকৃষ্ট হবে।’

অবশ্য উৎসাহের দিক বিবেচনায় ট্রাম্পের ভোটাররাও পিছিয়ে নেই। ৬৪ শতাংশ ভোটার বলেছেন, হ্যারিসের বিরোধিতা করার চেয়ে ট্রাম্পকে সমর্থন করেই তাঁরা বেশি অনুপ্রেরণা পান।

ভোটারদের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় কমলার চেয়ে ট্রাম্প অনেকটাই এগিয়ে। ৪৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, অর্থনীতি সামলাতে ট্রাম্প বেশি যোগ্য। কমলার ক্ষেত্রে এ সমর্থন মাত্র ৩৬ শতাংশ। তবে গর্ভপাত নীতিতে হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। ট্রাম্পের সমর্থন যেখানে ৩১ শতাংশ, সেখানে কমলার ৪৭ শতাংশ।

৪ হাজার ২৫৩ জনের মধ্যে রয়টার্স/ইপসোসের এ জরিপ চালানো হয়, যার মধ্যে নিবন্ধিত ভোটার ৩ হাজার ৫৬২ জন। এ জরিপ চালানোর সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট কেনেডি জুনিয়র প্রচার চালাচ্ছিলেন। তবে ২৩ আগস্ট তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৬ শতাংশ ভোটার।


সর্বশেষ সংবাদ