শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি ও কিছু কথা

 কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম  © টিডিসি ফটো

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মাঝে কিছুদিন করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখন তা আগের রূপ নিচ্ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ব্যাপারে এক ধরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও তা পরিবর্তন করে আগামী ২৩ মে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরণের জড়তা এসে গেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। করোনাকালীন সময়ে যদিও অনলাইনসহ সম্ভব সব ধরণের কৌশল নেওয়া হয়েছে যাতে করে শিক্ষার্থীরা দিনের একটি সময় পড়ার টেবিলে বসে। তাতে অবশ্য তেমন কার্যকর ফল আসছেনা বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। অপরদিকে ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকিতেও ফেলা যাবেনা। বলতে গেলে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। করোনা যে সহজে নির্মূল হবে তারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় করোনা থাকা সাপেক্ষে কীভাবে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল, কলেজ খোলা যায় তার কৌশল উদ্ভাবন ছাড়া কোনও উপায় নেই। নয়তো এ স্থবিরতা চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অপরদিকে, ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনসহ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন দিয়ে চলে সেগুলো কঠিন সময় পার করছে কিংবা ইতিমধ্যে অনেকগুলো বন্ধও হয়ে গেছে।

এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরবর্তী যে তারিখ দেওয়া হয়েছে সে তারিখেই যেন খুলতে পারে (করোনা থাকা না থাকা সাপেক্ষে) তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখন থেকেই। সরকার হয়তো মনে করছে এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝুঁকি নেওয়াটা সঠিক হবেনা। এরপরও যৌক্তিক কোনকিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখা উচিত।

শিক্ষাক্ষেত্রে যে অগ্রগতি আমরা অর্জন করেছি দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তা ভেস্তে যাবে। করোনার টিকা ইতিমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। অনেকে টিকা নিয়েছেন, নিচ্ছেন, নেবেন। মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকেও টিকার আওতায় নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করতে হবে। সম্ভব সব শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সব ধরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন হতে পারে। কীভাবে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করা যায় তার কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। এমন কৌশল নিতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা নিজে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের প্রতি আগ্রহী হয়। এজন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি পালনকারী শিক্ষার্থীদের পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা যায়। ক্লাসে করোনা থেকে বেঁচে থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা, দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলো জোর দিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বুঝাতে পারেন।

ক্লাসের ডিউরেশন ও সংখ্যা কমিয়ে, একজন শিক্ষক ক্লাসে আসার আগেই আরেকজন শিক্ষকের ক্লাসে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ থাকা, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষ করে দ্রুতই তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। পাশাপাশি একেক শ্রেণির ক্লাস একেকদিন করার কথা তো ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকতে হবে। স্কুল মাঠে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। এজন্য দুপুর ছুটির বিরতির সময়ই স্কুলের ক্লাস শেষ করতে পারলে সেটা কার্যকরী হতে পারে বলে মনে করি। অর্থাৎ আপাত: কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুপুরের বিরতি বাতিল করা যেতে পারে।

মূলত স্বাস্থ্যবিধি মানাটা শতভাগ কার্যকর করা গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো করোনা থাকা সাপেক্ষেও খোলা থাকতে পারবে। তাছাড়া, যা অবস্থা স্বাস্থ্যবিধি মানাটাকে স্থায়ী রূপ দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই!

এছাড়াও অন্য কোন কৌশল উদ্ভাবন করতে পারলে সেটাও এপ্লাই করা যায়। মূলকথা হলো শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে হবে। করোনাসহ সব ধরণের দুর্যোগেও যেন শিক্ষাকে অবিরত রাখা যায় সে কৌশলে আমাদের যেতে হবে। কারণ, শিক্ষা নষ্ট হলে নষ্ট হবে জাতি, নষ্ট হবে সমাজ ও দেশ।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক


সর্বশেষ সংবাদ