শহীদ পরিবারের জন্য নির্মিত হবে ৮০৪ ফ্ল্যাট, একনেক অনুমোদনের অপেক্ষা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৯:৩৭ AM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৪:১৭ PM
জুলাই গণ–আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে তাদের পরিবারকে স্থায়ী আবাসনের আওতায় আনতে রাজধানীর মিরপুরে বিশেষ ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় এই প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৬২ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণভাবে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে একনেক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে এবং ২০২৯ সালের মধ্যে তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় একটি সরকারি খাসজমিতে ৮০০-এর বেশি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে, যার মধ্যে ছয়টি ১৪ তলা ও দশটি ১০ তলা ভবন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১,৩৫৫ বর্গফুট, যেখানে দুটি শয়নকক্ষ, ড্রয়িং ও লিভিং রুম, রান্নাঘর, খাবার ঘর ও তিনটি টয়লেট থাকবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ–আন্দোলনে শহীদ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৩৪ জনকে। ইতোমধ্যে তাদের পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। এবারে তাদের আবাসন নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে বৃহৎ পরিসরের এই প্রকল্প।
আরও পড়ুন: দুদকের তদন্তের তালিকায় ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জটিল হচ্ছে উত্তরাধিকার নির্ধারণ। শহীদদের পরিবারের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, যার ফলে সঞ্চয়পত্রসহ সরকারি সহায়তা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৬৭১টি পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া সম্ভব হলেও বাকি ১৬৩টি পরিবার তা পায়নি।
বিশেষ করে, বিবাহিত শহীদদের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার হবেন বাবা-মা নাকি স্ত্রী-সন্তান—এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। ফলে সরকার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একটি সুনির্দিষ্ট ‘ওয়ারিশ নীতিমালা’ তৈরির পরিকল্পনা করছে, যাতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে ভবিষ্যতে জটিলতা না তৈরি হয়।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ফ্ল্যাটগুলো বিনা মূল্যে প্রদান করা হবে। তবে হস্তান্তরের সময় নিবন্ধন ফি হিসেবে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এই ব্যয় শহীদ পরিবারের নাকি সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ফ্ল্যাট বরাদ্দপ্রাপ্তরা তা বিক্রি বা ভাড়া দিতে পারবেন কি না—এই প্রশ্নেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেউ বিক্রি করতে চাইলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন নিতে হবে।
এছাড়া, যেসব শহীদ পরিবার ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য বিকল্প আবাসন ব্যবস্থার বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। এই অর্থ এককালীন অনুদান, মাসিক সম্মানী, চিকিৎসা, আবাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থায় ব্যয় হবে বলে জানানো হয়।