ঢাবির ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’

১১৬ ভাস্কর্যের ৯৮টিই ভাঙা, খোঁজ নেই  বাকি ১৮টির— গতি হলো না দেড় বছরেও

ভাঙচুর হওয়া ভাস্কর্যের একাংশ
ভাঙচুর হওয়া ভাস্কর্যের একাংশ  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও অযত্নে পড়ে আছে এসব ভাস্কর্য। সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১১৬টি ভাস্কর্যের মধ্যে ৯৮টি গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি ১৮টি ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভাস্কর্যগুলো বর্তমানে অযত্নে আগাছা আর ইটের স্তূপের মাঝে পড়ে আছে।

জাতির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের ধারক এই ভাস্কর্যগুলো ভাঙার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ দেড় বছর। এর মধ্যে চলে গেছে দুটি মহান বিজয় দিবস, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সেগুলোর মেরামত বা পুনঃস্থাপনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভাঙা ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে ছিল প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিকৃতি।

যেমন— এখানে বঙ্কিমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জগদীশ চন্দ্র বসু, মাইকেল মধুসুদন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শিল্পী সুলতান, জিসি দেব, সুভাষচন্দ্র বসু, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক, মহাত্মা গান্ধী, রাজা রামমোহন রায়, মাও সে তুং, ইয়াসির আরাফাত, কর্ণেল ওসমানী, তাজউদ্দিন আহমেদ, সিরাজ সিকদার, জর্জ হ্যারিসন প্রমুখের প্রতিকৃতি রয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতিও। ভাস্কর শামীম সিকদারেরও দুটি প্রতিকৃতি রয়েছে এর মধ্যে। আরও রয়েছে একটি হাতির চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য।

9
ভাঙচুরের আগে ভাস্কর্যগুলো

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট বিকালে ভাস্কর্যগুলো ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। গত ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ভাস্কর্যটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বরাবর স্মারকলিপি দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, সে আশ্বাস এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আমি জানি না। আগে এখানে ভাস্কর্যগুলো দেখাশোনা করার জন্য মালি ও গেইটম্যান ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল কম থাকায় তাদেরকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়— মো. আলী আশ্রাফ, সহকারী এস্টেট ম্যানেজার, ঢাবি

ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার সময় সেখানে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ আবু নাসের ম. মুনীরউজ্জামান ভবনের গেইটম্যান মো. শামসুল হক জানান, ৫ আগস্ট বিকালে একদল অতিউৎসাহী মানুষ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও দড়ি বেঁধে ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলে।  তারপর থেকে এগুলো এভাবেই পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সহকারী এস্টেট ম্যানেজার মো. আলী আশ্রাফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আমি জানি না। আগে এখানে ভাস্কর্যগুলো দেখাশোনা করার জন্য মালি ও গেইটম্যান ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল কম থাকায় তাদেরকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, চারুকলার ডিন ও কয়েকজন শিক্ষকের সমন্বয়ে ভাস্কর্য সংস্কারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

শামীম সিকদার নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর সংস্কার সবচেয়ে জটিল। উনার মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকায় অনুমতি ও শিল্পমূল্য সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া ভাস্কর্য সংস্কার অত্যন্ত দক্ষতা ও সময়সাপেক্ষ কাজ। একজন শিল্পীর চিন্তা ও সৃজনশীলতা হুবহু ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, যা দেশে খুবই সীমিত— অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ, ডিন, চারুকলা অনুষদ

ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের বিষয়ে এস্টেট অফিসের সঙ্গে আলোচনা করেছি। চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাথে ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য মিটিং করার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর কাজ করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে আমরা ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করি।

এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাস্কর্য সংস্কারে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষকরা এতে যুক্ত রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অপরাজেয় বাংলা ও রাজু ভাস্কর্যের সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, শামীম সিকদার নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর সংস্কার সবচেয়ে জটিল। উনার মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকায় অনুমতি ও শিল্পমূল্য সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া ভাস্কর্য সংস্কার অত্যন্ত দক্ষতা ও সময়সাপেক্ষ কাজ। একজন শিল্পীর চিন্তা ও সৃজনশীলতা হুবহু ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, যা দেশে খুবই সীমিত। এ কারণে একাধিকবার বৈঠকের মাধ্যমে পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো হচ্ছে।

ব্যবস্থাপনার সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাস্কর্য এলাকার নিয়মিত দেখ-ভালের কেউ নেই। এলাকাটি তালাবদ্ধ ও আগাছায় ভরে গেছে। বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence