শেকৃবি ভেট ক্লিনিকে অতিরিক্ত ফি ও অনিয়মের অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
- শেকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৯:৫৮ AM , আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫, ০৩:৩২ PM
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রুপ কুমারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সেবাগ্রহীতা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি ক্লিনিকটিকে ব্যক্তিগত ক্লিনিকের মতো ব্যবহার করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি এবং পেশাগত সীমা লঙ্ঘন করছেন।
সাধারণ রোগী ও শিক্ষার্থীদের দাবি, ডা. রুপ কুমার নির্ধারিত ফির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি অর্থ নিচ্ছেন, যার অধিকাংশই রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে না। অপারেশন ও চিকিৎসাসেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পাশাপাশি ক্লিনিকের ভেতরেই অনুমোদনহীন ওষুধ, ইনজেকশন ও ভ্যাকসিন উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কর্মচারীর মাধ্যমে রোগীদের বাড়িতে গিয়ে ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হচ্ছে।
শুধু অর্থনৈতিক অনিয়ম নয়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডা. রুপ কুমার তাদের ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করেন এবং শিক্ষকদের সামনেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লিনিকে নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা লাল মিয়া জানান, বিড়ালের রেকটাল ফ্লাশ করাতে তাকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে, যেখানে নির্ধারিত ফি সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা।
নরসিংদী থেকে আসা মাইশা নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘তিনটি বিড়ালের অপারেশনের জন্য ৫ হাজার ৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে, অথচ নির্ধারিত ফি ছিল মাত্র ৩ হাজার টাকা। প্রতিবাদ করলেও আমরা নারী হওয়ায় দুর্ব্যবহার করা হয়।’
আরেক ভুক্তভোগী, ফার্মগেটের আকাশ বলেন, ‘একটি চোখের চিকিৎসায় ৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে, অথচ রেজিস্ট্রারে লেখা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা।’
তদন্তে উঠে এসেছে, ক্লিনিকের ভেতরে অনুমোদনহীনভাবে উচ্চমূল্যে ইনজেকশন, ভ্যাকসিন ও ভিটামিন বিক্রি করা হচ্ছে। একটি ভ্যাকসিনের প্রকৃত দাম ৫০০ টাকা হলেও সেটি ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এমনকি ইনজেকশন দিতে কর্মচারী মোশাররফ হোসেন নামে এক রোগীর বাসায় গিয়ে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ নিচ্ছেন।
এক শিক্ষার্থী মিম কামাল অভিযোগ করেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পরদিনই আমার সুস্থ বিড়ালটি মারা যায়। ফোনে বিষয়টি জানালে ডা. রুপ কুমার এটিকে স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করলেও তার সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা পড়ে না। বরং এটি ব্যক্তিগত আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এক বছর আগেও ডা. রুপ কুমারের বিরুদ্ধে জাতীয় পত্রিকায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছিল। তবে তৎকালীন প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার কর্মকাণ্ড আরও বেপরোয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. রুপ কুমার বলেন, ‘অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়েছে অপারেশন-পরবর্তী ওষুধ ও যন্ত্রপাতির জন্য। ওষুধ বিক্রি করিনি, শুধু ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি বিষয়টি এখন জানলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’