মৌমাছি খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: শেকৃবি অধ্যাপক

র‌্যালির মাধ্যমে দিবস উদযাপন
র‌্যালির মাধ্যমে দিবস উদযাপন  © টিডিসি

পরাগায়নের মাধ্যমে মৌমাছি খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন। মঙ্গলবার (২০ মে) ‘খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে মৌমাছির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করি’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব মৌমাছি দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মৌমাছির অবদান অপরিসীম। পরাগায়নের মাধ্যমে মৌমাছি খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তাদের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।”

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে একটি র‌্যালির আয়োজন করা হয়, যেখানে কৃষি গবেষক, শিক্ষক, মৌচাষি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার। র‌্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ব মৌমাছি দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন। তিনি বলেন, রাস্তার ধারে ও খালি জায়গায় বেশি ফুল হয়—এমন ফলজ গাছ রোপণ করতে হবে, যাতে মৌমাছি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য পায়। এজন্য তিনি লিচু, আম, কলা, পেঁপে, বড়ই, সাজনা, কনকচূড়া ইত্যাদি গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন এবং জুন মাসকে ফলজ গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে মৌচাষে কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন অধ্যাপক সাখাওয়াত। তিনি জানান, জলবায়ুগত ভারসাম্যহীনতার কারণে অনেক গাছে নির্দিষ্ট সময়ে ফুল না ফোটায় মৌমাছির খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে তিনি সারাবছর ফুল ফোটে—এমন গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।

এছাড়া, থাইয়োমিথোক্সাম জাতীয় বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার মৌমাছির কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এজন্য দিনে নয়, বরং বিকেল বা সন্ধ্যায় বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন, কারণ মৌমাছি দিনে সক্রিয় থাকে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ভালো মানের রাণী মৌমাছির পর্যাপ্ত সংস্থান নেই, ফলে মৌমাছির প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় বিদেশ থেকে উপযোগী জাতের রাণী মৌমাছি আমদানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

পাশাপাশি, বাজারজাতকরণেও নানা ধরনের প্রশাসনিক হয়রানির মুখে পড়েন মৌচাষিরা, যা তাদের উৎসাহ ও আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আধুনিক প্রশিক্ষণ, মৌচাষি-বান্ধব গাছ রোপণ, নিরাপদ ও মৌমাছি-সহনশীল কীটনাশক সহজলভ্য করা এবং মৌমাছির জন্য পর্যাপ্ত কলোনি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। একই সঙ্গে, মৌচাষিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য ও বাজার সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ