ঘুম থেকে ওঠার পর সকালে ক্লান্তি, চিকিৎসকদের পরামর্শে জেনে নিন সমাধান
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫২ AM , আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ AM
ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকেই অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অলসতা ও দুর্বলতা অনুভব করেন বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই অভিযোগ বেশি দেখা যায়। সম্প্রতি ‘কোয়ারাতে’ একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন—‘আমি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, HbA1c ৭.৩; প্রতিদিন সকালে খুব ক্লান্ত বোধ করি, এটা কিভাবে সমাধান করব?’ এই প্রশ্নের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নিচের বিশ্লেষণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালবেলার এই ক্লান্তি একাধিক কারণে হতে পারে রক্তে শর্করার ওঠানামা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ, বা শরীরে ভিটামিনের ঘাটতির কারণে এই ধরনের অনুভূতি দেখা দেয়। তাই কেবলমাত্র HbA1c পরীক্ষার ফল দিয়ে রোগীর অবস্থা সম্পূর্ণ বোঝা সম্ভব নয়।
দিল্লির সিকে বিরলা হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. মনীষা অরোরা বলেন, HbA1c-এর লক্ষ্যমান ভিন্ন হতে পারে রোগীর বয়স ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। তরুণদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশের মধ্যে HbA1c রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়। তবে বয়স্ক রোগী বা যারা একাধিক শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে ৭ থেকে ৭.৮ শতাংশের মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, অনেক রোগী কেবল ফাস্টিং সুগার পরীক্ষা করে ধরেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু খাবারের পর রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে যায়, যাকে বলা হয় গ্লাইসেমিক ভ্যারিয়েবিলিটি। উদাহরণস্বরূপ, ফাস্টিং সুগার ৯০ হলেও খাবারের পর তা বেড়ে ২৫০ বা ৩০০-তে পৌঁছাতে পারে। এই ওঠানামা শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং নানা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার জন্ম দেয়।
আরও পড়ুন: দুধ পানের উপকারিতা
তাই শুধু HbA1c নয়, রক্তে শর্করার দৈনন্দিন প্যাটার্ন বোঝার জন্য দিনের বিভিন্ন সময়ে খাবারের আগে ও পরে সুগার পরীক্ষা করা উচিত।
এই বিষয়ে মুম্বাইয়ের গ্লেনইগলস হাসপাতাল ফিজিশিয়ান ও ডায়াবেটোলজিস্ট ডা. আরতি উল্লাল বলেন, শুধু শর্করার ওঠানামা নয়, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনও সকালের ক্লান্তির জন্য দায়ী। যদি খাদ্যে সহজ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি এবং প্রোটিন কম থাকে, তবে শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই প্রতিটি খাবার হতে হবে সুষম যাতে জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও আঁশ (ফাইবার) থাকে।
ডা. অরোরা বলেন, দিনে অন্তত ২০–৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করলে ক্লান্তি দূর হয় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাবার গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট রাখাও ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
অপর্যাপ্ত ঘুম এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরকে আরও দুর্বল করে তোলে। অনেক সময় ভালোভাবে না ঘুমালে বা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকলে, শরীর সেই প্রতিক্রিয়া দেখায় ক্লান্তি বা ব্যথা আকারে even যদি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডা. অরোরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গুণগত মানসম্পন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ডা. উল্লালও বলেন, মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন খুবই কার্যকর হতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভিটামিনের ঘাটতি। ডা. অরোরা বলেন, শরীরে ভিটামিন B১২ বা ডি-এর ঘাটতি থেকেও ক্লান্তি আসতে পারে। এ ছাড়া, যদি কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে ইনসুলিন শরীরে বেশি সময় ধরে থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিলেও অন্যান্য বিপাকীয় জটিলতা তৈরি করতে পারে এবং ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলোর মধ্যে কিডনি ফাংশন টেস্টও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সবশেষে, ডা. উল্লাল বলেন, ‘আপনার ওষুধগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে উপযুক্ত কিনা, তা নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’
সব মিলিয়ে, সকালের ক্লান্তি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত উপসর্গ হতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস