রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে কী করবেন, জেনে নিন

রক্তচাপ মাপা হচ্ছে (প্রতীকী ছবি)
রক্তচাপ মাপা হচ্ছে (প্রতীকী ছবি)  © সংগৃহীত

ভাবুন তো, একদিন হঠাৎ মাথা ঘুরছে, বুক ধড়ফড় করছে, চোখের সামনে অন্ধকার দেখছেন, আপনি ভাবছেন গরম লেগেছে বা একটু ক্লান্তি। কিন্তু তখনই আপনার রক্তচাপ হয়তো ১৮০/১১০ ছুঁয়ে ফেলেছে! বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং অনেকেই জানেন না। আর যারা জানেন, তারাও অনেক সময় ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানেন না। এভাবেই একসময় হঠাৎ একদিন ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়—স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি মৃত্যু। কীভাবে বুঝবেন রক্তচাপ বেড়েছে?

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. এনামুল করিম জানান, একাধিক দিন রক্তচাপ মেপে যদি বারবার সিস্টোলিক (উপরের চাপ) ১৪০ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক (নিচের চাপ) ৯০ বা তার বেশি থাকে, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে ধরা হয়। তবে অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক, লক্ষণ নাও থাকতে পারে।

মাঝে মাঝে দেখা যেতে পারে

মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, বুক ধড়ফড় করা বা অস্থিরতা, অবশ লাগা বা ঝিমুনি।

কেন হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে

নিয়মিত ওষুধ না খাওয়া বা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া

ওষুধ ভুল সময়ে বা ভুল মাত্রায় গ্রহণ

মানসিক চাপ বা টেনশন

অন্যান্য রোগ যেমন কিডনি বা থাইরয়েড সমস্যা

স্টেরয়েড, ব্যথানাশক বা ভেষজ ওষুধ গ্রহণ

অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া

অতিরিক্ত কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয়

আরও পড়ুন: বাড়িতে ওয়াইফাই স্লো? সমাধান করুন নিজেই

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কী করবেন

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে সচেতনভাবে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্থির না হয়ে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

বসে পড়ুন ও বিশ্রাম নিন: চাপ কমাতে প্রথমেই আরামদায়ক অবস্থানে বসুন এবং শারীরিকভাবে স্থির থাকুন।

গভীরভাবে শ্বাস নিন: ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, এতে মানসিক চাপ কমবে।

রক্তচাপ মাপুন: প্রেসার মেশিন থাকলে তা দিয়ে রক্তচাপ মেপে নিন।

পুনরায় মাপুন: ৫ মিনিট পর আবার রক্তচাপ মাপুন। এখনো যদি বেশি থাকে, তবে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।

পেছনের কারণ ভাবুন: নিয়মিত ওষুধ খেয়েছেন তো? খাবারে অতিরিক্ত লবণ ছিল কি না? কোনো মানসিক চাপ ছিল কি?—এসব বিষয় ভাবুন।

কখন দ্রুত চিকিৎসা নেবেন

নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যান: তীব্র মাথাব্যথা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা ঝিমুনি, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

কী খাবেন, কী খাবেন না

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শুধু ওষুধ নয়, খাবারদাবারের দিকেও দিতে হবে বাড়তি মনোযোগ। কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে আপনার নিয়ন্ত্রণের বড় অস্ত্র।

উপকারী খাবার

শাকসবজি: প্রতিদিন অন্তত ৪–৫ বারের মতো বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আছে ফাইবার ও নানা রকম খনিজ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

গোটা দানাশস্য: লাল চাল বা লাল আটা দিয়ে তৈরি খাবার দিনে ৭–৮ সার্ভিং পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। এগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার ও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স।

ফলমূল: কলা, কমলা, খেজুর, তেঁতুল ইত্যাদি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

কম চর্বিযুক্ত দুধ বা দই: ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সরবরাহ করে, যা রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যকারিতায় সহায়ক।

আরও পড়ুন: সিগারেট টানার ১০ সেকেন্ডের মাথায় শুরু হয় অ্যাকশন

যা এড়িয়ে চলবেন

অতিরিক্ত লবণ: রান্নায় লবণ কম দিন, বাড়তি লবণ টেবিলে যোগ করবেন না।

প্রক্রিয়াজাত খাবার: যেমন প্যাকেটজাত স্যুপ, সসেজ, নুডলস, চিপস—এসব খাবারে লবণের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি।

অতিরিক্ত চা-কফি: ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়াতে পারে, তাই সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল: এগুলো রক্তচাপ হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে রক্তনালীর ক্ষতি করে।

তেঁতুল কি রক্তচাপ কমায়

অনেকে মনে করেন তেঁতুল খেলে তাৎক্ষণিক রক্তচাপ কমে যায়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এর পটাশিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদে সহায়ক। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতিতে তেঁতুল খুঁজে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের উচিত প্রতিদিন ওষুধ নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, নিয়মিত রক্তচাপ মাপা এবং জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা। হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ।

 


সর্বশেষ সংবাদ