লিচু যখন শরীরের জন্য বিষ হয়ে ওঠে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ০৫:৪০ PM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ০৪:৩১ PM
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের অন্যতম জনপ্রিয় ফল লিচু। স্বাদের কারণে যেমন এর চাহিদা তুঙ্গে, তেমনি এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী নানা উপাদান। তবে এই মিষ্টি ফলে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও লুকিয়ে আছে, যা অনেকেই জানেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে এই ফল শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সব ধরনের ভিটামিন আর খনিজে ভরপুর এসব ফল। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানির উৎস।
লিচু খাওয়ার উপকারিতা
লিচু স্বাদে ভরপুর ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি রক্তের শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে করে শক্তিশালী। লিচুর লিচিট্যানিন শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কপার আছে, যা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়। এতে থাকা আয়রন, ফলিক অ্যাসিড শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল, যা প্রদাহ কমায়। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাংগানিজ ও কপার। হাড়ের যত্নেও সহায়ক এসব মিনারেল।
লিচুর অলিগোনল নামের উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে কাজ করে। এই উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
লিচুর অন্যতম উপাদান এপিকেচিন, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই চমৎকার একটি উপাদান। এপিকেচিন রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো প্রতিরোধে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পাকা লিচুর চেয়ে কিছুটা বেশি কার্যকর কাঁচা লিচু। তবে অতিরিক্ত পাকা লিচু খেলে ডায়াবেটিক রোগীর ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে। ফলে শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। লিচু ওজন বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন: হাসি মানেই হেলথ থেরাপি: প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসলে পাবেন যেসব সুফল
শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি করতে বাধা দেয়। এটি আমাদের যকৃতে গ্লুকোজ উৎপাদন ও চর্বি ভাঙতে বাধা দেয়। তাই খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুদের খালি পেটে কখনো লিচু দেওয়া যাবে না। হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে শিশুর শরীরে হঠাৎ করে গ্লুকোজের অভাব দেখা দেয়। কিছু টক্সিন তৈরি হয়, টক্সিনগুলো মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে শিশুর মাথাব্যথা, বমি, ঘাম, খিঁচুনি হতে পারে এবং শিশু অচেতন হয়ে পড়তে পারে। আধা-পাকা ও কাঁচা লিচুতে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এভাবে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি শিশু মারা যায়। তবে যেসব শিশু বেশি অপুষ্টির শিকার, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
তাই শিশুদের লিচু খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, লিচু যেন পাকা হয় এবং শিশু যেন অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার পরে লিচু না খায়। ২-১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
খালি পেটে লিচু খেলে যা হয়
লিচুতে আছে হাইপোগ্লাইসিন নামক একটি উপাদান। এটিও হতে পারে মৃত্যুর কারণ! যদি আপনি খালি পেটে লিচু খান তবে হাইপোগ্লাইসিন নামক এই উপাদান শরীরে শর্করার মাত্রা একেবারেই কমিয়ে দেবে। শরীরে শর্করা মাত্রাতিরিক্ত কমে গেলে তা শরীরের জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ফলে হতে পারে মৃত্যুও! তাই খালি পেটে লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কাঁচা লিচু খাবেন না
পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন খুব বেশি থাকে না। তবে কাঁচা লিচুতে এই ক্ষতিকর উপাদান থাকে অনেক বেশি। যে কারণে কখনোই কাঁচা লিচু খাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় শিশুরা না বুঝেই কাঁচা লিচু খেয়ে ফেলে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি যে ক্ষতিকর তা তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে।
আরও পড়ুন: ভিটামিনের অভাব ওষুধ খেয়ে মেটাচ্ছেন? লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে বেশি
কখন খাবেন, কতগুলো খাবেন
খেতে সুস্বাদু হলেও ইচ্ছেমতো লিচু খাওয়ার সুযোগ নেই। দিনে ১০-১২টি লিচু খাওয়া যেতে পারে। বয়স, শরীর, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিমিত পরিমাণে লিচু বা যে কোনো ফল খেতে হবে। খালি পেটে লিচু খাওয়া ভীষণ ক্ষতিকর হলেও ভরা পেটে লিচু খেলে সমস্যা হয় না। ভরা পেটে অর্থাৎ খাওয়ার মিনিট ত্রিশেক পর লিচু খেলে সমস্যা হবে না। তবে পছন্দের ফল বলে একসঙ্গে অনেকগুলো লিচু খাবেন না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খুব বেশি লিচু খেলে জ্বর হয় শরীরে।