যত চিনি তত বিপদ: দিনে কতটুকু চিনি খাওয়া ঠিক?

চিনি
চিনি  © সংগৃহীত

আমাদের অনেকেরই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় চিনি অপরিহার্য। এক কাপ চা, কফি কিংবা নাস্তার মিষ্টি পদে চিনি যেন স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু জানেন কি, এই চিনি একসময় ধীরে ধীরে শরীরের জন্য ‘নীরব ঘাতক’ হয়ে উঠতে পারে? চিনি শুধু মিষ্টি নয়—অতিরিক্ত খেলে হতে পারে ভয়ংকর বিপদ। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিশোধিত চিনি শুধু ক্যালোরি সরবরাহ করে, তাতে নেই কোনো পুষ্টিগুণ। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিস ডাকে, হৃদ্‌রোগ ও লিভার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

কতটা খাওয়া নিরাপদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দৈনিক গ্রহণকৃত মোট ক্যালোরির ১০% এর বেশি চিনি হওয়া উচিত নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি দিনে ২,০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন, তাহলে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০ ক্যালোরি চিনির মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন—যা প্রায় ১০ চা চামচ চিনির সমান।
তবে, সুস্থ থাকতে চাইলে এই মাত্রা আরও কমিয়ে আনাই উত্তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনকি দিনে কেবল ৫% ক্যালোরি (৫-৬ চা চামচ) চিনি থেকে নেয়ার কথাও বলছে।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে:একজন সুস্থ নারী দিনে সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম (প্রায় ৬ চা চামচ) চিনি গ্রহণ করতে পারেন। একজন পুরুষের জন্য এই মাত্রা ৩৬ গ্রাম (প্রায় ৯ চা চামচ)। যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন বা কম শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সীমা আরও কম হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক ও হজমের জাদু লবঙ্গ চা

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব

১. ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: পরিশোধিত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় দ্রুত ক্যালোরি বাড়ায়।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়, যা ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
৩. হৃদ্‌রোগ: উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ফ্যাটি লিভার: অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভারে চর্বি জমায়।
৫. স্মৃতি হ্রাস ও মানসিক অবসাদ: অতিরিক্ত চিনি মানসিক স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৬. ত্বক বুড়িয়ে যায়: চিনি ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে দ্রুত।
৭. দাঁতের ক্ষয়: মুখে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে দাঁতের সমস্যা তৈরি করে।

চিনি আসক্তি

চিনি খাওয়ার পর মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ হয়, যা সাময়িক আনন্দ দেয়। একে বলা হয় রিওয়ার্ড সিস্টেম। ঠিক যেমনটি ঘটে মাদক সেবনের পর। ফলাফল? একসময় শরীর আরও বেশি চিনি চায়—শুরু হয় চিনি আসক্তি।

চিনি কমিয়ে খাওয়ার কিছু উপকারিতা

পরিমাণমতো চিনি গ্রহণ করলে ওজন হ্রাস, পেটের মেদ কমা, ত্বক তরুণ দেখাবে, কর্মশক্তি ও এনার্জি বাড়বে, দুপুরে ক্লান্তি কমবে, মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়বে, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমবে, ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা কমবে, হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে, আবেগ ও মনমানসিকতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আরও পড়ুন: সিগারেটের সঙ্গে গরম চা—ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ

করণীয়

চিনিযুক্ত পানীয় (কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস) পরিহার করুন, খাবার কেনার সময় লেবেল পড়ে যোগ করা চিনি আছে কি না যাচাই করুন, প্রাকৃতিক চিনি (ফল, দুধ) খেতে পারেন, তবে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। চিনি ছাড়া ভেষজ চা ও পানীয় বেছে নিন।

চিনি আমাদের খাদ্যতালিকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, সচেতনভাবে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন সময়ের দাবি। মনে রাখবেন, পরিমাণ মতো চিনি ভালো, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চিনি—একটি নীরব বিষ।


সর্বশেষ সংবাদ