ধরন পরিবর্তন হলেও করোনা আর ভয়ঙ্কর হবে না: ড. বিজন

অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল
অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল  © ফাইল ছবি

সম্প্রতি দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। অনেক দিন ধরে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে থাকলেও হার এখন ১৩ শতাংশের ওপরে। এদিকে সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে মূল ভাইরাসের নতুন ধরন (ভেরিয়েন্ট) সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫ দ্বারা সংক্রমণ হচ্ছে।

তবে মহামারি করোনা ভাইরাস বর্তমানে যতই ধরন পরিবর্তন করুক না কেন, আগের মতো আবার ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হতে পারবেনা বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অণুজীববিজ্ঞানী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল। তাই সংক্রমণ নিয়ে চিন্তিত হলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫ দ্বারা সংক্রমণ হচ্ছে। অন্যান্য ভাইরাসকে নতুন এ উপধরন দখল করে নিয়েছে।

সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষকও নতুন এ ধরণ শনাক্ত করেছেন। করোনার নতুন এ উপধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় অত্যন্ত মারাত্মক। কিন্তু ২০২০ এবং ২১ সালে করোনা ভাইরাস যেভাবে আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল, ২০২২ সালে এসে যেখানে এখন ম্যাক্সিমাম মানুষের শরীরে এন্টিবডি রয়েছে, কিংবা ইমিউন সিস্টেম অনেক স্ট্রং রয়েছে, তা করোনার টিকা নেওয়ার কারণেই হোক, বা ন্যাচারাল এক্সপোজারের কারণেই হোক। এ দুইয়ের সমন্বয়ে আমাদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ইমিউনিটি আছে। আমার ধারণা এটা ৯৫ শতাংশের বেশি হবে, ব্রিটেনে যা রয়েছে ৯৯ দশমিক চার শতাংশ। আমাদের দেশে এমন গণনা করে দেখা হয়নি।

তবে দেশে যেভাবে ডেলটা, ওমিক্রন এবং করোনার অন্যান্য ধরন সংক্রমণ ঘটিয়েছে, এরপর প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে, তাতে এ মুহূর্তে করোনা যতই রূপ পরিবর্তন করুক না কেন,পূর্বের ন্যায় আগ্রাসী ভূমিকায় যেতে পারবেনা।

ওমিক্রনের নতুন এ উপ-ধরনের নিয়ে  তিনি বলেন, নতুন এ উপ-ধরন যতই সংক্রমণ ঘটাক না কেন, মৃত্যু বা দুর্ঘটনার হার পূর্বের অবস্থায় কখনই যেতে পারবেনা। কারণ শুরুর দিকে করোনার কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না, মানুষের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে এন্টিবডি ছিল না, কিছুটা ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মত অবস্থা ছিল তখন। তবে বর্তমানে করোনার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাই করোনা এখন আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনার সিমটোমিক ইনফেকশন হবে, সামান্য জ্বর, কাশি, মাথা ও গলা ব্যথা হতে পারে। প্রচণ্ড ভ্যাঁপসা গরমে মানুষের ইমিউন সিস্টেম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, এ পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে এটার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও ২৫ থেকে ৩০ দিন চলবে, এরপর ধীরে ধীরে নেমে যাবে। সামনেই আসছে কোরবানির ঈদ, ঈদকে কেন্দ্র করে গরুর হাট, কেনাকাটা এবং ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে মানুষের চলাচল বাড়বে। ফলে সংক্রমণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এখন যদি মানুষজনকে প্রশ্ন করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে আপনার সামান্য জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি হয়েছিল কিনা, প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তর দিবে হ্যাঁ হয়েছিল। এসবই হচ্ছে বর্তমানে ওমিক্রনের উপ-ধরণের লক্ষণ। কিন্তু এদের কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাবে না, কিংবা টেস্ট করাবে না। হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিবে খুবই সামান্য সংখ্যক লোক। পূর্বে করোনায় যেমন শ্বাসকষ্ট কিংবা অন্যান্য তীব্র জটিলতা বা হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা যেত, সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা এবার একেবারেই কম।

এ অণুজীব বিজ্ঞানী আরও বলেন, মানুষের শরীরে দুই ধরণের এন্টিবডি থাকে। একটা হচ্ছে- লোকাল এন্টিবডি, আরেকটা এন্টিবডি মানুষের ব্লাড থেকে আসে। লোকাল এন্টিবডি শরীরে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মত থাকে। এ সময়ে কোনো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে লোকাল এন্টিবডি প্রোটেকশন দেওয়ার ফলে ভাইরাস বৃদ্ধি হতে পারেনা। আবার এ ৯০ দিন পর কোনো ভাইরাস শরীরে ঢুকলে সেই ভাইরাস ব্লাড থেকে এন্টিবডি না আসা পর্যন্ত বাড়তে থাকে। এ সময়টায় রোগীর মধ্যে কিছু সিমটম দেখা দেয়, যেমন সামান্য জ্বর সর্দি- কাশি, গলা ব্যথা। ব্লাড থেকে এন্টিবডি আসলে ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। এ সময় সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের কারণে অনেকের কাশি বেশি হয়। দিনে ৭/৮ বার হালকা গরম চা খেলে কাশি হয়না। জ্বর, মাথা ব্যথা বা সর্দিকাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল বা এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই রোগী ভালো হয়ে যাবে। তাই ২০২০ এবং ২১ সালে করোনা ভাইরাস যেভাবে বাহাদুরি দেখিয়েছিল, সেই সম্ভাবনা আর নেই।

বছরের এ সময়টায় অনেকেই বিভিন্ন ফ্লু জাতীয় ভাইরাসে আক্রান্ত হন, এ দুটি রোগকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে চিকিৎসা সেবা নেওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence