প্রাধ্যক্ষ অপসারণ দাবি থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

প্রাধ্যক্ষ অপসারণ দাবি থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
প্রাধ্যক্ষ অপসারণ দাবি থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ অপসারণের দাবি থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি থেকে। এদিন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধের জেরে। অসদাচরণের অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভে নামেন ছাত্রীরা।

রাত ১১টার দিকে তারা অবস্থান নেন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দেন সমাধানের আশ্বাস। রাত আড়াইটায় ছাত্রীরা ফিরেন হলে।

তিন দফা দাবি

করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে পরদিন জাফরিন আহমেদকে ছুটিতে পাঠান উপাচার্য। অন্য একজনকে করেন ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু পুরো কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর, ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ; তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। তাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উপচার্যের ঘণ্টাব্যাপী আলাপেও আসেনি সমাধান। শতাধিক আবাসিক ছাত্রী উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে শুরু করেন বিক্ষোভ।

আরও পড়ুন: নানা মারা যাওয়ার খবরেও অনশন ভাঙেনি শাবিপ্রবির রুবি

‘ছাত্রলীগের’ হামলা

তৃতীয় দিনে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে শাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় প্রক্টরের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে বলে ছাত্রীরা জানান। তাদের একজন বলেন, ‘‘আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা ১০-১২ জন ছাত্রকে তারা বেধড়ক মারধর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির এ সময় সেখানে ছিলেন।’’ প্রক্টর ও ছাত্রলীগের এক সদস্য একে ‘হাতাহাতি’ হিসেবে অভিহিত করেন।

পুলিশের হামলা

ছাত্রীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। তাদের সঙ্গে একাত্ব হন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। ১৬ তারিখ আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন তারা। তাকে মুক্ত করতে বিকালে উপস্থিত হয় পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তারা লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে। শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ আহত হন অর্ধশত।

পুলিশের মামলা

পরদিন পুলিশই অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করে। অভিযোগ শিক্ষার্থীরা গুলি বর্ষণ ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করেছে। তবে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৩১টি শটগানের গুলি এবং ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শাবি শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

রোববার সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন বারোটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেয় তারা। এরমধ্যে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান উপাচার্য। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশি হামলার ঘটনার এবার উপাচার্যকেই যেতে হবে। ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

প্রশাসনিক ভবনে তালা

শিক্ষার্থীদের দুপুর বারোটার আগে হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রাখে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা সেই নির্দেশ অমান্য করে উল্টো উপাচার্য কার্যালয়, দুটি প্রশাসনিক ভবন ও চারটি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এক সমাবেশ থেকে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে শাবিপ্রবিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।

সাবেকদের সহমর্মিতা

কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ করায় নির্দেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীরা খাবার নিয়ে পড়েন বিপাকে। সমাধান হিসেবে হাজারো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের পাশে নিজেরাই রান্না ও খাবার আয়োজন শুরু করেন। আন্দোলনে একাত্মতার পাশাপাশি এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে পত্র

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৮ তারিখ রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আব্দুল হামিদের কাছে চিঠি পাঠান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা লিখেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলায় শাবিপ্রবি উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার কর্তৃক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপর অর্পিত দায়িত্বের বরখেলাপ।’’

আরও পড়ুন: ভিসির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল, অনশন অব্যাহত

আমরণ অনশন

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ও পুলিশের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯ তারিখ থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিকাল ৩টায় শুরু করা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন নয়জন ছাত্রী ও ১৫ ছাত্র। অনশনকারীদের ঘিরে রাখেন অন্য ছাত্র-ছাত্রীরাও। এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা।

অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

সময় যত গড়াচ্ছে তত স্তিমিত হচ্ছেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশন করা ১১ জন শিক্ষার্থী শুক্রবার পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে; আমরা পর্যাপ্ত মেডিকেল সাপোর্ট পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও আমাদের কোনো মেডিকেল সাপোর্ট দিচ্ছে না।’’ আলোচনার জন্য কোষাধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করলেও উপাচার্যের কোনো সাড়া মিলছে না।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কে

বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমইসি ডিগ্রিধারী। তার কোনো ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত টানা পাঁচ মেয়াদ ঢাবির সমাজ বিজ্ঞানের ডিন ছিলেন। সরকারপন্থি নীল দলের রাজনীতিতে যুক্ত এই শিক্ষক নেতা ২০১৭ সাল থেকে শাবিপ্রবির ভিসি। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence