ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ AM
স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত ৬৭৮ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। চোরাচালান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ এবং এর উৎস গোপন রেখে অবৈধ অর্থপাচারের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শুরু করে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। প্রাথমিক তথ্য–প্রমাণে চোরাচালান ও উৎসহীন সম্পদের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় ১৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে ৬,৭৮,১৯,১৪,০১৪ (ছয়শত আটাত্তর কোটি উনিশ লক্ষ চৌদ্দ হাজার চৌদ্দ) টাকার মানিলন্ডারিং মামলা (গুলশান থানার মামলা নং–৩০, তাং–১৭/১১/২০২৫, ধারা ৪(২)(৪), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, সংশোধনী–১৫) রুজু করে সিআইডি।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ মামলায় আসামি ১৩
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা (৫৭), পিতা অমিয় কুমার আগরওয়ালা (ওম প্রকাশ) ও মাতা তারা দেবী আগরওয়ালার ছেলে। স্থায়ী ঠিকানা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাজার পাড়া এবং বর্তমান ঠিকানা বনানীর হাউস ১০ (ফ্লোর–২), রোড ২/৩, ঢাকা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মালিক হিসেবে দেশে–বিদেশে স্বর্ণ ও হীরার ব্যবসার আড়ালে অর্থপাচার ও চোরাকারবারি করে আসছিলেন।
সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থেকে ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে মোট ৩৮,৪৭,৪৮,০১১.৫২ (আটত্রিশ কোটি সাতচল্লিশ লক্ষ আটচল্লিশ হাজার এগারো টাকা বায়ান্ন পয়সা) টাকার স্বর্ণবার, অলংকার, লুজ ডায়মন্ড ও অন্যান্য দ্রব্য বৈধভাবে আমদানি করে। কিন্তু একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়, বিনিময় বা পরিবর্তন পদ্ধতিতে ৬,৭৮,১৯,১৪,০১৪ (ছয়শত আটাত্তর কোটি উনিশ লক্ষ চৌদ্দ হাজার চৌদ্দ) টাকার স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ করে, যার উৎসের বৈধ কাগজপত্র প্রদান করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। সিআইডি বলছে, এসব বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও হীরা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
চোরাচালান এবং অপরাধলব্ধ অর্থ রূপান্তর, হস্তান্তর বা ব্যবহারের নথিপত্র পর্যালোচনায় মানিলন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হলে অনুসন্ধান প্রতিবেদন অতিরিক্ত আইজিপি, সিআইডির কাছে দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া এই মানিলন্ডারিং মামলা সিআইডির তফসিলভুক্ত হওয়ায় তদন্তও সিআইডিই পরিচালনা করছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র, ব্যাংক লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য যাচাই করে আইন অনুযায়ী নিবিড় তদন্ত চলছে।
রাষ্ট্রের অর্থপাচার রোধ ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে সিআইডি এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানানো হয়েছে।