জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলা

শেষ সাক্ষীকে আজ জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  © সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আজ জেরা করবেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। 

সোমবার (৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ জেরা অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি মামলার ৫৪তম তথা শেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন চলাকালে দেশের ৪১টি জেলায় ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। তার দেওয়া সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল আজকের দিনটি জেরার জন্য নির্ধারণ করেন।

ট্রাইব্যুনালে ওইদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে আলমগীর বলেন, তিনি যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন জব্দ করেন এবং তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। এসময় ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ওই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল। তার জবানবন্দি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয় এবং বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্র ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়, যাতে আন্দোলনের সময়কার নির্মমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এ মামলায় ২৫ কার্যদিবসে মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষে মামলাটি যুক্তিতর্ক ও রায়ের পর্যায়ে যাবে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন। পরে তাকেও জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এবং নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন।

সাক্ষীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর দেশব্যাপী চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এসব ঘটনায় দায়ী হিসেবে শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ও বিবরণ রয়েছে ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়। সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৮১ জনকে।

গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।


সর্বশেষ সংবাদ