আনন্দবাজার পত্রিকা
ভারত এখনও আশা করছে, আবার হাসিনা ক্ষমতায় ফিরবেন!
- টিডিসি ওয়ার্ল্ড
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১২ PM
ইউনূস নিউ ইয়র্কে বসে হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অভিযোগ খারিজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। শুধু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’
আমেরিকার মাটিতে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতের মাটিতে বসে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন বলে নরেন্দ্র মোদীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ সভায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে ইউনূস একটি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ‘প্রথম আলো’য় তা প্রকাশিত হয়েছে। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার নেপথ্যে নয়াদিল্লির ‘স্বার্থ’ সম্পর্কিত প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, ‘তারা (ভারত) বরাবরই তাঁকে (হাসিনা) সমর্থন করে আসছে। যাঁরা তাঁর পিছনে আছেন, তাঁরা সম্ভবত এখনও আশা করছেন যে তিনি পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। একজন বিজয়ী নেতা হিসেবে ফিরবেন।‘
সাক্ষাৎকারে ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন, ভারত কখনও হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তারা (ভারত) যদি নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সম্ভবত তারা তাঁকে (হাসিনা) রেখে দেবে। যদি আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে থাকে, যা তারা এড়াতে পারবে না, তখন পরিস্থিতিটা ভিন্ন হবে।’ তবে হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোর প্রচেষ্টা করার অভিযোগ তোলেননি ইউনূস। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক এ ভাবে কথাগুলো বলব না। তবে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে বাইরের কিছু শক্তি তাঁকে (হাসিনা) বাংলাদেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে। আমরা সব সময় এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর হাসিনা সংক্রান্ত আলোচনার কথাও জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ইউনূস জানান, মোদীকে দু’টি বিষয় বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘প্রথমত, আমি বলেছিলাম, আপনারা যদি তাঁকে (হাসিনা) রাখতে চান, তাঁর সঙ্গে কী করবেন, তা আমি আপনাকে (মোদী) বলতে পারি না। তবে এটা যেন নিশ্চিত করেন যে, তিনি আমাদের সম্পর্কে কথা বলবেন না। তিনি যেন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে কথা না বলেন।’ মোদীর কাছ থেকে এ বিষয়ে যে তিনি ইতিবাচক জবাব পাননি, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন ইউনূস। তিনি বলেন, ‘তিনি (মোদী) বলেছিলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’
জনবিক্ষোভের জেরে ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বিমানে ঢাকা থেকে উত্তরপ্রদেশের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে চলে এসেছিলেন হাসিনা। সেই থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। নিয়মিত ভাবে সমাজমাধ্যমে বক্তৃতাও করছেন। এর আগে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর কাছে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের মাটি থেকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার এমন বিবৃতি নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।’ তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইউনূস নিউ ইয়র্কে বসে হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অভিযোগ খারিজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। শুধু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’ তবে আগামী বছরের নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে না, সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন ইউনূস।