এক যুগ ধরে দলীয় কার্যালয় বিহীন টঙ্গীতে চলছে বিএনপির দুই থানার কার্যক্রম
- মির্জা নাদিম, গাজীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৯ AM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৫ PM

রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর মহানগরের অন্যতম জনবহুল ও শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা টঙ্গীর পূর্ব ও পশ্চিম থানায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কোনো আনুষ্ঠানিক দলীয় কার্যালয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা থাকলেও সংগঠনটির স্থায়ী একটি কার্যালয় গড়ে তুলতে পারেনি তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনীতিসচেতন অনেকে বলেন, এখন আর কেউ জানে না বিএনপির অফিস কোথায়। আগে কিছু ভাড়াবাড়িতে ব্যানার-পোস্টার ঝুলিয়ে দলীয় কার্যক্রম চললেও এখন সেগুলোরও অস্তিত্ব নেই। যেসব বাসাবাড়ি বা দোকান থেকে সাময়িক কর্মকাণ্ড চালানো হতো, সেখানেও দলীয় চিহ্ন দেখা যায় না।
টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন এ ব্যাপারে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ‘টঙ্গীতে বিএনপির কোনো অফিস নাই। তবে আমি চেষ্টা করছি, একটা ভালো জায়গা খুঁজছি যেখানে অফিস করা যায়। অতি শিগগিরই ইনশাআল্লাহ করে ফেলবো, মাস খানিকের মধ্যে।’
তবে এ নিয়ে মহানগর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না না, এই ব্যাপারে কারো সাথেই কথা হয় নাই। অফিস তো আগে ছিল, সেটা কিভাবে কে নিয়ে গেছে, সেটা যারা তখন ছিল তারাই ভালো বলতে পারবে।’
গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন বলেন, ‘আগে আমাদের যে জায়গায় অফিস ছিল, তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দখল করে নেয়। টঙ্গী একটি বাণিজ্যিক এলাকা, ফলে ফাঁকা জায়গা পাওয়া কঠিন। তাছাড়া আমাদের মুরুব্বি নেতারা নিজেরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, যদি ঐক্য ফিরে আসে, অফিস গড়তেও সময় লাগবে না।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও টঙ্গীর প্রবীণ নেতা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছে, তারা কিছু না করলে আমার কিছু বলার নাই। সংগঠনের ভবিষ্যৎ ভালো না। যারা দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারাই আজ নেতা হয়ে ঘুরছে। আমি তো প্রবীণ নেতা, কোনো প্রোগ্রাম করলে আমাকে জানায়ও না।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও টঙ্গীর স্থায়ী বাসিন্দা আরিফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দ্রুত অফিস করবো ইনশাআল্লাহ। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা আলাদা হয়ে যাওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। তাছাড়া জায়গারও সংকট রয়েছে, তবে ভালো জায়গা পেলেই অফিস হবে।’
তিনি মনে করেন, নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও সংগঠনের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ গড়ে তুলতে একটি দৃশ্যমান ও সক্রিয় অফিসের বিকল্প নেই।
তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর মহানগর বিএনপি বর্তমানে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। কেউ সালাউদ্দিন সরকারের অনুসারী, কেউ হাসান উদ্দিন সরকারের, আবার কেউ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মন্জুরুল করিম রনির অনুসারী। এই বিভাজনই স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক স্থবিরতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘বিএনপি কর্মসূচি দেয়, কিন্তু কোথা থেকে দেয় তা কেউ জানে না। অফিস না থাকা মানে সংগঠনটাই নেই—এমন ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়। দলীয় কার্যালয় হলো সাংগঠনিক উপস্থিতির দৃশ্যমান চিহ্ন, যা এখন টঙ্গীতে অনুপস্থিত।’
অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিডিয়ায় টঙ্গীর নেতাদের মুখ অনেকবার দেখা যায়, কিন্তু দলীয় কার্যালয় স্থাপনের বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেই। একজন বলেন, ‘দেখেন, অন্য দল কীভাবে এলাকায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমরা নিজেরা মিটিং করতে গেলে জায়গা খুঁজতে হয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।’