যেসব কারণে বিসিবি সভাপতি হতে পারবেন না তামিম
- মোহাম্মদ রনি খাঁ
- প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৭ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৮ PM
তামিম ইকবাল, দেশের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এক নাম। সাম্প্রতিক সময় বলছি বলে অবাক হচ্ছেন? না, হতবাক হওয়ার কিছুই নেই। তরুণ থেকে প্রবীণ, ক্রিকেট ভালোবাসেন তাদের সবার কাছেই পরিচিত মুখ চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার। মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই গুঞ্জন চলছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) আসছেন তামিম, এ-ও শোনা যাচ্ছে, দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থার শীর্ষ পদেই আসছেন।
সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদও শীর্ষপদে আসীন হয়ে ক্রিকেটের স্বার্থে তাকে বোর্ডে পা রাখার ইঙ্গিত করেছিলেন। তবে সে সময়ে যদি কিন্তুর বেশ কিছু সমীকরণ ছিল। আলোচনা সেখান থেকেই শুরু।
ঘটনা চক্রে এখন আর বোর্ডে নেই ফারুক। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে বোর্ডের শীর্ষপদে কলকাঠি নাড়ছেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দায়িত্ব নিয়ে টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে তাকে ঘিরেও সময়ের পরিক্রমায় জল ঘোলাটে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচন করবেন তিনি। কিন্তু এখনও নিজের সিদ্ধান্তে অটল বুলবুল। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননিও।
এদিকে দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম অবসর নেওয়ার পর থেকেই তাকে ঘিরে নানান নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। অবশ্য ২২ গজকে বিদায় জানানোর আগেও তার অবসর-অবসর ভেঙ্গে মাঠে ফেরার নাটকও দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।
খেলোয়াড়ি জীবনে আধিপত্য দেখানো তামিম এবার ক্রিকেট রাজনীতিতে হট কেক!জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা ও দেশের ক্রিকেটে অবদান, এসব বিবেচনায় তামিমকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভাবা যায়, কিন্তু বাস্তবতা ততটা সহজ না। অতীত ভিন্ন কিছু বলছে। এতদিন নির্বাচন করার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও এবার খোলামেলা আলাপে বলেছেন, নির্বাচন করছেন। তবে সভাপতি পদেই কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রেখেছেন।
বোর্ডের সভাপতি হওয়াটা কেবলই একজন সাবেক তারকা ক্রিকেটারের জন্য উন্মুক্ত নয়। এটি একটি নির্বাচিত পদ, সেই সঙ্গে কিছু ধাপ পেরিয়েই এই পদে আসীন হতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক বিষয়টিও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে থাকে।
বিসিবির সভাপতি পদে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ নেই৷ এই পদে নির্বাচন করতে প্রথমেই তামিমকে সাধারণ পরিষদের সদস্য বা পরিচালক হতে হবে। বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ক্লাব বা বিভাগ থেকে প্রতিনিধিরা এই পদের জন্য নির্বাচন করে থাকেন। অবশ্য এরই মধ্যে দুটি ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়েছেন তামিম। নিয়মিত অর্থায়নও করছেন। স্পষ্ট করে বললে, প্রাথমিক পরীক্ষায় লেটার মার্ক পাচ্ছেন তামিম। কিন্তু বিসিবি সভাপতি সমীকরণ যেন বন্ধুর পথ!
এদিকে নিজেদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করেন বোর্ড পরিচালকরা। কিন্তু বাস্তবতা সহজ না, এই প্রক্রিয়ায় সরকার ও রাজনৈতিক মহলের প্রভাব মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে। অতীত বলছে, যেসব ব্যক্তি এই পদে ছিলেন, তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। প্রায় তিন মেয়াদে বিসিবির শীর্ষ পদে থাকা নাজমুল হাসান পাপন কিংবা আ হ ম মোস্তফা কামাল বা সাবের হোসেন চৌধুরী, তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্পষ্টত, সরকারের সমর্থন নিয়েই বিসিবির ঘড়ির কাটার নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বর্তমান সভাপতি বুলবুলও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবুজ সংকেত নিয়েই দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার থেকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিচ্ছেন।
এই জায়গায় তামিমের সামনে দুটি পথ! তবে রাজনৈতিক কলিং বেলটাকে নিজের সেরা ইনিংসের মত খেললেই সবটা পথ সহজ হয়ে যাবে। প্রথমত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আস্থাভাজন হয়ে উঠা। এরপর সভাপতি পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য বড়শি ফেলা। তবে অস্থায়ী এই সরকারের অধ্যায় শেষ হলে আবার ছাড়তে হতে পারে বিসিবি বসের ম্যাজিকময় চেয়ার।
দ্বিতীয়ত, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে চাওয়া-পাওয়ার যোগসাজশ আলোচনা এগিয়ে রাখা। তবে ক্ষমতা মঞ্চে কোন রাজনৈতিক দল নিশানা উড়াচ্ছেন, তা নিয়েও আছে নানান প্রশ্ন।
এদিকে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বিপিএলের কারণেও পথ জটিল হচ্ছে তামিমের। অবশ্য অনেকেই বলছেন, বিসিবির ডাইরেক্টর হয়ে গেলে আর কখনোই ক্রিকেট খেলতে পারবে না তামিম! নিয়ম নীতিও তাই বলছে। এতে, বিপিএল দল বরিশালকে নতুন অধিনায়কের সন্ধানে নামতে হবে। তামিমই দলটির চালিকাশক্তি। অবশ্য সময়ই বলে দেবে, তামিম শুধু মাঠের নায়ক নাকি ক্রিকেট প্রশাসনেও নেতৃত্ব চমক দেখাবেন। সবকিছুর জট খুলতে পারে আগামী সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিসিবির বোর্ড মিটিংয়ে।