রাজশাহীতে গভীর গর্তে নিখোঁজ শিশুর উদ্ধারকাজ নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

শিশু সাজিদকে উদ্ধারে গর্ত
শিশু সাজিদকে উদ্ধারে গর্ত  © সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা গর্তে পড়া দুই বছর বয়সী শিশুটিকে এখনাে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাজিদ নামের শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ এবং স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুপুর একটার দিকে তানোর উপজেলার কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামে আগেই খনন করা একটি গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ।

তানোর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট এখন কাজ করতেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫০ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।‘

ঘটনাস্থলে মূল গর্তের পাশ থেকে মাটি কেটে পথ তৈরি করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বুধবার দুপুরে কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মোঃ রাকিবের ছেলে শিশু সাজিদ, মায়ের সাথে হেঁটে ওই স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গর্তে পড়ে যায় বলে জানা যায়।

শিশুটির মা রুনা খাতুন ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন,এক পর্যায়ে একজনকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। যে শিশুটিকে মা কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন সেই শিশুটিই গর্তে পড়ে গিয়েছে।

‘দুই ছাওয়াল দুই গালেত (কোলে) নিছি, পরে একটা নামায়া দিছি.. ওকেই নামায়া দিছি। দিয়া আমি সামনে গেছি আমার পোলাডা পিছে পিছে যাচ্ছিলো, যাতে লাইগা পিছলায়া পইড়া গেছে। আমি পিছে ঘুরে তাকায় দেখি ছাওয়াল আমার মা মা কইরা ডাকছে, পিছে ঘুইরা তাকায়া দেখি ছাওয়াল নাই। গর্তের থিকা মা মা কৈরা ডাকছে’ বলছিলেন রুনা খাতুন।

গতকালই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

'যে গর্তে পড়েছে সেটি অনেক সরু'

পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান বিবিসিকে বলেছেন, শিশুটি যে গর্তে পড়েছে সেটি অনেক সরু। 'গতর্টা অনেক সরু। ছয় থেকে আট ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গর্ত। (শিশুটি) ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে পড়েছে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ক্যামেরা ওইটুক পর্যন্ত গিয়েছে" বলেন তিনি।

তবে, ক্যামেরায় শিশুটিকে দেখা যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। শিশুটি যে গর্তে পড়েছে তার চারদিকে তিনটি এক্সকাভেটর (মাটি খননকারী যন্ত্র) দিয়ে মাটি খনন করে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।  ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওখানে পাইপ দিয়ে সতর্কতার সাথে কাজ করছে। আমরা ধারণা করছি ৩৫ ফুটের মধ্যে শিশুটি আছে,’ বলেন পুলিশ কর্মকর্তা মি. শাহীনুজ্জামান।

 শিশুটিকে উদ্ধার করতে আরো সময় লাগবে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ‘সময় লাগবে আরো, মাটি নিচে নরম। ঝুরঝুর করে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা’ বলেন মি. শাহীজ্জামান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত মূল গর্তের পাশে ৩৫ ফিট গভীরে গিয়ে মাটি কেটেও শিশুটিকে না পাওয়ায় আরো অতিরিক্ত পাঁচ ফিট পর্যন্ত মাটি খনন করার সিদ্ধান্ত নেয় ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এখন ৪০ ফুটের বেশি গভীর পর্যন্ত মাটি খনন করার কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফায়ার সার্ভিস ছোট এক্সকাভেটর দিয়ে খনন কাজ শুরু করে। পরে রাতে ১০টার দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো বড় এক্সকাভেটর দিয়ে খনন শুরু হয়। রাতভর মাটি খনন কাজ চলে।

অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে গর্তে

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে ঘটনার খবর পান তারা। সেখানে পৌঁছানোর আগে স্থানীয় মানুষ প্রাথমিকভাবে চেষ্টা করায় বেশ কিছু মাটি গর্তের ভেতরে পড়ে গিয়েছিলো।

তানোর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী বেলাল হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘৩৫ ফিট পর্যন্ত তারের মাধ্যমে সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা নিয়ে গেছে, সেখানে শিশুটিকে পাওয়া যায় নাই। পরে আরো অতিরিক্ত পাঁচ ফিট খনন করা হয়েছে। ৪০ ফিট পর্যন্ত যাওয়ার পরও এখনো বাচ্চার কোনো হদিস পাওয়া যায় নাই।‘ তবে, শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান মি. হোসেন।

ঘটনাস্থলে একটি মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ‘ওই অ্যাম্বুলেন্স থেকে পাইপ দিয়ে গর্তে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনও অক্সিজেন চলতেছে। যদি আল্লাহ (শিশুটিকে) বাঁচায়ে রাখে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে জীবিত উদ্ধার করার জন্য।’

নলকূপের গর্ত খোঁড়ার নিষেধাজ্ঞা

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন উচ্চ খরাপ্রবণ এলাকা। সেখানে মাটির ১২০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও ভূ-গর্ভস্থ পানির সন্ধান মেলে না। তবে, এই এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো যাবে না বলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

যেখানে শিশুটি পড়ে গিয়েছিলো সেই জমির মালিক একটি গভীর নলকূপ বসানাের জন্য বছর খানেক আগে আট ফুট ব্যাসার্ধের একটি কূপ খনন করিয়েছিলেন। কিন্তু পানি না পেয়ে গভীর নলকূপ বসানোর কাজটি আর এগোয়নি, অর্থাৎ খনন কাজে ফল মেলেনি, কিন্তু গর্তটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এবার বর্ষায় মাটি দেবে গিয়ে সেখানে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হয়। আর সে গর্তেই শিশুটি পড়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence