ফেনীতে বিএনপি-জামায়াত বিরুদ্ধে করা ২২৩ মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে

জেলা ও দায়রা জজ আদালত
জেলা ও দায়রা জজ আদালত  © টিডিসি ফটো

ফেনীতে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ২২৩টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অধিকাংশ মামলাই দায়ের হয়েছিল বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায়।

বুধবার (১৮ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনী জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দীন খান। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এসব মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে করা হয়েছিল।

সরকারি কৌঁসুলি ও জেলা জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, ৪৫৬টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) প্রাপ্ত পত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সহকারী সচিব মো. মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক তথ্য সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তিনি জানান, এ মামলাগুলোর অধিকাংশই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যার মাধ্যমে তৎকালীন প্রশাসন বিরোধীদলীয় কর্মীদের হয়রানি করেছে।

ফেনীর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দীন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ফেনীতে করা ৪৫৬ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লিখিত মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বসছেন ট্রাম্প

তিনি আরও বলেন, এসব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের হয়রানি ও সামাজিক প্রতিকূলতা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বৈরাচারী সরকারের আমলে করা হয়রানিমূলক মামলাগুলো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

পিপি মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন, এসব মামলার বেশির ভাগই ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে বিপুলসংখ্যক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করা হয়।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মুফতি মাওলানা আবদুল হান্নান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াতের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২২৫টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। ১৫২টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ১২৭টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আরও রয়েছে ২৮টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা। ইতিপূর্বে আদালতে শেষ হয়েছে ৮১টি মামলা।

আরও পড়ুন : ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম, ভোগান্তিতে জনজীবন

এদিকে ফেনীতে ২২৩টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানান ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বছরের  পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীরা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় কারাগারে গিয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমি নিজেও একাধিকবার জেলা খেটেছি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার নামেও ৬৫-৭০ টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

তবে ফেনী পৌর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া দাবি করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৮০টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছিল যা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে সব মিলে ২২৩টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মেজবাহ উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এসব মামলায় তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল, অনেকে ইতিমধ্যে জেলও খেটেছেন। বাকি মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ