২৪-এর নির্বাচনে বিএনএম প্রার্থী বুলু হলেন এনসিপির সমন্বয়ক

এনসিপির সমন্বয়ক বুলু
এনসিপির সমন্বয়ক বুলু  © টিডিসি সম্পাদিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদর্শিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাতক্ষীরা জেলা কমিটিতে বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের আলোচিত ও বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে ‘নোঙর’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান বুলু বর্তমানে এনসিপির সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

বুলু সাতক্ষীরার ‘আল-বারাকা শপিং কমপ্লেক্স’-এর মালিক এবং ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে পরিচিত বিএনএম (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন) প্ল্যাটফর্মের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (৩ জুন) এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।

কমিটি ঘোষণার পর বিভিন্ন আন্দোলনকর্মী ও সামাজিক সংগঠকেরা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আনারুল ইসলাম সান নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, "ফ্যাসিস্ট হাসিনার ২৪-এর ডামি নির্বাচনের সহযোগী আল-বারাকা শপিংয়ের মালিক জামরুজ্জামান বুলু এখন এনসিপির জেলার নেতা! আমার প্রশ্ন, হাসনাত—কত টাকার ডিল এটা? বুলু ২৪-এর আন্দোলনে কী ভূমিকা রেখেছিল?"

এস এম জান্নাতুল নাঈম নামে একজন মন্তব্য করেন, "শহীদদের রক্ত চুষে আপনারা 'কিংস পার্টি' বানিয়ে, স্বৈরাচারের দোসরদের থেকে টাকা নিয়ে পদ-পদবি দিয়ে দল চালাচ্ছেন। আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য। শত শহীদের অভিশাপ লাগুক!"

২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া একাধিক আন্দোলনকর্মী বলেন, "যে বুলু ২৪-এর প্রহসনের অংশ ছিল, সে আজ এনসিপির নেতা! তাহলে কি আমরা সেই ফ্যাসিস্ট নির্বাচনকে বৈধতা দিতে শুরু করলাম? ২৪-এর ছাত্রনির্ভর আন্দোলনে বুলু কোথায় ছিলেন? আমরা তখন কাঁদছিলাম রাস্তায়, আর তিনি ব্যস্ত ছিলেন ব্যানার টাঙাতে! আজকে তিনি নেতা—এটা কীভাবে মেনে নিই?"

তারা আরও বলেন, "আমরা ভেবেছিলাম এনসিপি হবে পরিবর্তনের প্ল্যাটফর্ম। এখন দেখছি, সেখানে ব্যবসায়ী সুবিধাবাদীদের জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। আদর্শের জায়গা থেকে এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করছি। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আন্দোলনের ভিতরে যদি সেই ফ্যাসিস্ট প্রার্থী ঢুকে পড়ে, তবে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। এটা স্পষ্টতই বিশ্বাসঘাতকতা।"

তাদের প্রশ্ন, "বুলু কি ২৪-এর বিক্ষোভে ছিলেন? না, তিনি ছিলেন সরকারের অনুগত একজন প্রার্থী। আজ এনসিপি তাকে দায়িত্ব দিয়ে আন্দোলনের চেতনাকেই অপমান করেছে।"

এ বিষয়ে দলটির অবস্থান জানতে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মনিরুজ্জামান এবং দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেসবাহ কামাল মুন্নার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 


সর্বশেষ সংবাদ