বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে মূল লড়াই ৫৫ হাজার আসনে

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকে সবার
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকে সবার  © প্রতীকী ছবি

২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। অন্যদিকে, এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন রয়েছে ৫৫ হাজারের মতো। 

ফলে উত্তীর্ণ হওয়া উচ্চমাধ্যমিকের এসব শিক্ষার্থী তো দূরের কথা ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক পেয়েও অনেকেই ভর্তি হতে পারবেন না পছন্দের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ কারণে এবারও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হবে। 

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি টিপস

তবে উচ্চশিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৩ লাখেরও বেশি আসন রয়েছে। আর এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় আসে না। এর ফলে উচ্চশিক্ষায় আসনের কোনো সংকট নেই। বরং কয়েক লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিযুদ্ধে নামতে হবে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানা যায়, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০। খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ভর্তি প্রস্তুতিঃ চুয়েট-রুয়েট-কুয়েট স্বপ্ন যাদের

আর চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী) স্নাতকোত্তর সমমানের শিক্ষা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। এই ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি ৩৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর প্রায় ৫৫ হাজার আসন ছিল। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৩৯৬টিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসন কমেছে। এছাড়া সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসনসংখ্যা ৫ হাজারের কম। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরেই মূলত শিক্ষার্থীদের আগ্রহ।

বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৮৫, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৯২৬, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৯৩, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ১৩৩, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭৫৬ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২১৫টি আসন রয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ: নেট আসক্তি যখন আশীর্বাদ!

এছাড়া ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ১০০টিতে আসন প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসায় ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ৬টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালে সাড়ে ৭ হাজার, সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড এরোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মানসম্মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও হাতে গোনা। এছাড়া এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও প্রায় ছয় লাখ। তাদের অনেকেই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে পছন্দের আসন নিয়ে তুমুল যুদ্ধে নামতে হবে শিক্ষার্থীদের।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। সেখানে ভর্তির সুযোগ না পেলে অন্য অধিভুক্ত কলেজ কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবেন।

এইচএসসি পাশ করা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সব শিক্ষার্থীই পছন্দের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। সে হিসাবে প্রথম পছন্দ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বুয়েট, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এবার উচ্চশিক্ষায় আসনের ক্ষেত্রে কোনো সংকট হবে না। তবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে হবে। আমাদের উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ আসনই অধিভুক্ত কলেজে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।


সর্বশেষ সংবাদ