অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

কক্ষ দখলে নিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থী তুলছেন ছাত্রলীগের নেতারা

কক্ষ দখলে নিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থী তুলছেন ছাত্রলীগের নেতারা
কক্ষ দখলে নিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থী তুলছেন ছাত্রলীগের নেতারা  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের কয়েকটি কক্ষ দখলের অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কক্ষ দখলে নিয়ে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের এসব নেতারা তাদের পছন্দের শিক্ষার্থী তুলছেন।

বিজয় একাত্তর হল সূত্রে জানা গেছে, হলটি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল সংসদের সাবেক ভিপি সজিবুর রহমান সজীব যমুনা ব্লকের ৯০০৩, ৯০০৪ ও ৯০০৮ নম্বর রুম জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের তুলে দেন।

আরও পড়ুন: আবাসিক হল বন্ধসহ ৫ দাবিতে উত্তাল বুটেক্স, ভিসি অবরুদ্ধ

একইসঙ্গে হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হল সংসদের সাবেক এজিএস আবু ইউনুসের নেতৃত্বে পদ্মা ব্লকের ১১০০৩, ১১০১১ ও ১১০১৩ নম্বর রুম এবং হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে যমুনা ব্লকের ৪০০৭ ও পদ্মা ব্লকের ৪০০৩ নম্বর রুম জোরপূর্বক দখলে নেয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, রুমগুলোতে চারজনের জায়গায় ডাবলিং করে আটজন করে থাকতেন। এছাড়া আরও দুই-তিন জন শিক্ষার্থী ফ্লোরিং করে থাকতেন। ছাত্রলীগ নেতারা গত কয়েকদিন ধরে রুমগুলো দখলের চেষ্টা চালাতে থাকেন।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে হিন্দু ছাত্রীদের জন্য আলাদা মন্দির হচ্ছে

গত কয়েকদিনে নেতারা তাদের অনুসারী দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে রুমগুলো দখল করে নেয়। রুমে আগে থেকে অবস্থানরত মাস্টার্সের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়; কয়েকজনকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয় এবং বাকিদেরকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কোন রুম দখল করিনি। কাউকে জোর করে রুম থেকেও বের করে দেইনি। এই হলে প্রসাশন সিট দেয়। আমরা কিছু করতে পারিনা।

আরও পড়ুন: রাবির হলে তালা ভেঙে সিট দখলে নিলো ছাত্রলীগ

আরেক অভিযুক্ত আবু ইউনুস বলেন, নতুন স্টুডেন্ট যারা তাদের সংযুক্ত রুমে উঠতে চাচ্ছে, সেখানে তারা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওই রুমগুলোতে অবস্থানরত যারা আছেন তাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা ওই রুমে অবস্থান করে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং নতুন ছাত্রদের উঠতে দিচ্ছেনা।

ইউনুস আরও বলেন, যে ছাত্রদের ওই রুমে সিট পড়েছে এবং যারা আমাদের শরণাপন্ন হচ্ছে তাদেরকে আমরা সহায়তা করছি। যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের সাথে কথা বলেই এটা করা হচ্ছে। ছাত্রত্ব আছে এমন কোন শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। যাদের বের করা হয়েছে তাদের কারো ছাত্রত্ব নেই।

এছাড়া অভিযুক্ত সজিবুর রহমান সজীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা কর হয়েছে। তার কাছ থেকে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: রুম দখল নিয়ে ঢাবির হলে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া

বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রুম দখলের ব্যাপারে আমি এখন পর্যন্ত কিছু শুনিনি। আর যাদেরকে বের করা দেয়া হয়েছে তাদেরও কেউ অভিযোগ করেনি। আর যার ছাত্রত্ব নেই, তাকে বের করার দায়িত্ব হল প্রশাসনের। অছাত্র যারা রয়েছেন তাদের তো এমনিতেই বের হয়ে যাওয়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, যারা অছাত্র রয়েছে তাদের আমরা দুই মাস আগেই চিঠি দিয়ে রুম ছাড়ার জন্য বলেছি। আর যদি তারা রুম না ছেড়ে থাকে তাহলে সেটা আমরা দেখব। কিন্তু ছাত্রলীগের কোন নেতা বা কাউকে বের করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারটা আমরা দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সজিবুর রহমান সজীব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, আবু ইউনুস সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও হারুনুর রশিদ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। তারা সবাই হল ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি’’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।

এর আগেও বিজয় একাত্তর হলে রুম দখলকে কেন্দ্র করে হল প্রাধ্যক্ষের সাথে দুর্ব্যবহার করার নজীর রয়েছে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আবু ইউনুসের বিরুদ্ধে। সেসময় গভীর রাতে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের রুম ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া তাকে হল থেকে বহিষ্কারও করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ