‘আনসাং উইমেন’ অ্যাওয়ার্ড পেলেন চবি শিক্ষার্থী নদী

সানু আক্তার নদী
সানু আক্তার নদী  © টিডিসি

জেসিআই বাংলাদেশ উইমেন অব ইনস্পিরেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এর ‘আনসাং উইমেন’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী।

রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কার প্রদান করে তরুণদের আন্তর্জাতিক সংগঠন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) বাংলাদেশ।

জানা যায়, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা নারীদের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যেই ‘উইমেন অব ইনস্পিরেশন অ্যাওয়ার্ড’ চালু করেছে সংগঠনটি। এবারের ২৫তম বর্ণাঢ্য আয়োজনে চিকিৎসা, প্রযুক্তি, ব্যবসা, ফ্যাশন, বিনোদন ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন খাতের ১০ জন নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লাকে তার অসামান্য সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এসময় সমাজের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ‘আনসাং উইমেন’ বিভাগে সম্মাননা পান সানু আক্তার নদী।

দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা নদীর গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের শালবন এলাকায়। তিনি ‘এক টাকায় শিক্ষা’ নামক একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি অবহেলিত শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং পাঠ্যপুস্তক, খাতা-কলমসহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী সংগ্রহ করে তাদের মাঝে বিতরণ করেন। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, নদী একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ৫ মাস বন্ধ থাকার পর আজ ক্লাস শুরু কুয়েটে

এ অর্জন সম্পর্কে অনুভূতি জানিয়ে সানু আক্তার নদী বলেন, “জেসিআই বাংলাদেশে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে আমিই একমাত্র ছাত্রী ছিলাম, যিনি সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন’ বিভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে গর্বের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছি। এটি আমার জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার, যা এখনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি সেইসব মেয়েদের, যারা নীরবে লড়াই করে, প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন। খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড় থেকেও যে স্বপ্ন দেখা সম্ভব, আমি তা বিশ্বাস করি। এই সম্মাননা আমার কাছে কেবল একটি পুরস্কার নয়, বরং স্বপ্ন দেখা ও সাহসের প্রতীক।”

নদী জানান, তিনি চান দেশের প্রতিটি অবহেলিত শিশুর কাছে যেন শিক্ষার আলো পৌঁছে যায়। পাশাপাশি তরুণদের সামাজিক কাজে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কারণ পরিবর্তন একা সম্ভব নয়, সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।”

উল্লেখ্য, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির সেন্ট লুইসে অবস্থিত। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে জেসিআইয়ের কার্যক্রম রয়েছে এবং সদস্যসংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে সংগঠনটির ৪৪টি লোকাল চ্যাপ্টার কাজ করছে, যারা তরুণদের দক্ষতা, জ্ঞান ও নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

 


সর্বশেষ সংবাদ