সংস্কার নয়, মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা

আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা
আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সংস্কারের জন্য চারুকলা ইন্সটিটিউটে যাওয়া শ্রমিকদের কাজ করতে দেয়নি চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। মূলত ক্যাম্পাসে ফিরতেই তারা ২২ দফা দাবি দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তবে কিছু দাবি এখনই পূরণ সম্ভব নয় বরং সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

চারুকলা ইন্সটিটিউট শহরে অবস্থিত হওয়ায় অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। কিন্তু উল্টো মত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, তদের মতে চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা সেখানে রয়েছে যা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মূল ক্যাম্পাসে নেই। এছাড়াও তারা মনে করেন পুরাতন কলা অনুষদ ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে যা চারুকলার শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়।

আরও পড়ুন: ছাত্রীদের গাছে উঠা নিষিদ্ধ করলো ঢাবির রোকেয়া হল

চারুকলা ইন্সটিটিউটের অনেক শিক্ষকের অভিমত, তারা শহরের ক্যাম্পাসেই থাকবেন এবং এটিই ইন্সটিটিউটের জন্য মঙ্গলজনক। শহরে অবস্থিত চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাস এবং শাটলের সুবিধা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা তারা পেতে চান। 

৩ নভেম্বর থেকে ২২ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ডাক দেয় চবির চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দাবির প্রায় সবগুলোই ছিল মূলত সংস্কারমূলক। তাতে চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার কোনো দাবি ছিল না। 
তবে, শিক্ষার্থীদের ২২ দফা মেনে নিয়ে কাজ শুরু করে প্রশাসন। কিন্তু শ্রমিকদের বাঁধা দেয় শিক্ষার্থীরা। বিষয়টিকে নেতিবাচক এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

সম্প্রতি ৯ নভেম্বর থেকে সংস্কারের আন্দোলন রূপ নিয়েছে স্থানান্তর করার আন্দোলনে। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের সংস্কারমূলক দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিজস্ব বাস চালু, ডাইনিং ও ক্যান্টিন তৈরি, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, বেসিনের সুব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নির্মাণ, আর্ট ম্যাটারিয়ালসের ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাঠাগার সংস্কার, জেনারেটরের ব্যবস্থা, মেডিকেল ব্যাকআপ, খেলাধুলার পর্যাপ্ত ইনসট্রুমেন্টের ব্যবস্থা।

তাদের আরও কিছু দাবির মধ্যে রয়েছে, মেয়েদের থাকার হলের ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্মূল, প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে বৈদ্যুতিক সংকট নিরসন, ছাত্র ও ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানো, ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ, ওজুখানা ও নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা, সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য লকারের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং ছাত্রদের হলের ব্যবস্থা।

এব্যাপারে ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শায়লা শারমিন বলেন, চারুকলাতে সবকিছুই যেমন স্টুডিও, গ্যালারি এই ইন্সটিটিউটের জন্য ডেডিকেটেড। অবকাঠামোগত ভাবে এটা ইন্সটিটিউটের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে পুরনো হয়ে গেছে তাই সংস্কার এবং উন্নয়ন প্রয়োজন। তবুও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তাদের আবেগের জায়গা হতে। 

এবিষয়ে ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে। তারা মূল ক্যাম্পাসের দিকে ফিরতে চাচ্ছে। এটি তো আর বললেই হয় না। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। তাই এখন করনীয় হলো তাদের হলরুম, ক্লাসরুম, ইলেক্ট্রিসিটি, পাঠাগার ইত্যাদি সমস্যাগুলো সমাধান করার ব্যবস্থা করা। তাই করছি।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, আমরা আন্দোলনের প্রথম দিনেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সাথে বসেছিলাম। তাদের দাবিগুলোর সাথে আমরাও একমত। দাবিগুলোর মধ্যে কিছু আছে স্বল্পমেয়াদী আর কিছু দীর্ঘমেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী যেগুলো আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসকে উপাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু ক্যাম্পাসে ফিরে আসার যে দাবি তারা জানাচ্ছে এটা যথাযথ পর্ষদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়ে আসতে হবে। এটা যেহেতু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই এ ব্যাপারে তাদেরকে নির্দিষ্ট পর্ষদের মাধ্যমে আসতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদি যে সমস্যাগুলো আছে তা সমাধান করে তাদেরকে ক্লাসে ফেরত যেতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ