যোগাযোগে দুর্বল? দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন ‘সেভেন সি’ ব্যবহারে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

বর্তমান যুগকে বলা হয় যোগাযোগের যুগ। প্রফেশনাল বা ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে থাকি, কিন্তু অনেকসময় আমাদের বার্তা সঠিকভাবে, সঠিক স্থানে পৌঁছায় না। প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড ক্লাম্পিট তাঁর একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, বার্তার ব্যাকরণ, স্পষ্টতা বা প্রাপকের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। যোগাযোগের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমেরিকান দুজন অধ্যাপক স্কট এম. কাটলিপ এবং এ্যালেন এইচ. সেন্টার ১৯৫২ সালে তাঁদের 'ইভেক্টিভ পাবলিক রিলেশনস' বইতে 'সেভেন সি' ফর্মুলার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে তাঁরা দাবি করেন, যোগাযোগের সময় সঠিকভাবে সাতটি নীতি অনুসরণ করলে বার্তা সহজে বোঝা যায়, শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ হয় এবং পেশাদার জীবনের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগের এই ‘সেভেন সি’   যোগাযোগকে আরও কার্যকর ও প্রভাবশালী করতে পারে—

১. পরিপূর্ণতা (Completeness)
যোগাযোগে পরিপূর্ণতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কথার বা লেখার সময় প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকতে হবে, যাতে শ্রোতা বা পাঠকের মনে কোনো প্রকার দ্বিধা বা প্রশ্ন না থাকে। কারণ আপনার বক্তব্য বা লেখার ওপর ভিত্তি করেই অন্যপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় বা প্রতিক্রিয়া জানায়।

পরিপূর্ণ যোগাযোগের কিছু সুফল হলো-
এটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করে, সময় ও অর্থের অপচয় কমায়, বারবার ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ও দ্রুত হয়।

২. সংক্ষিপ্ততা (Conciseness)
দক্ষ যোগাযোগবিদ কখনো বেশি কথা বলেন না, বরং অল্প কথাতেই যেকোনো বিষয় শ্রোতা বা পাঠককে বোঝাতে সক্ষম। সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্ততা মানে হচ্ছে, মূল কথাটাকে যতটা সম্ভব কম শব্দে বলা। যোগাযোগের সময় একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, শ্রোতা বা পাঠক ব্যস্ত। তাই প্রশস্তভাবে কথা বললে কিংবা লিখলে, কথার মূলভাব বোঝার জন্য তার অনেক সময় ব্যয় হবে এবং সে বিরক্ত হবে। লেখা বা কথা সংক্ষিপ্ত হলে এমনটা হয় না। এর দ্বারা সময় অপচয় রোধ হয়।

৩. বিবেচনা (Consideration)
যোগাযোগের সময় নিজেকে শ্রোতা বা পাঠকের অবস্থানে বিবেচনা করা দক্ষ যোগাযোগের অন্যতম শর্ত। শ্রোতার শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক পটভূমি, জাত–ধর্ম ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিলে যোগাযোগ আরও কার্যকর হয়। আপনি যদি গ্রামের সাধারণ মানুষের সামনে গিয়ে ইংরেজিতে বক্তব্য প্রদান করেন তাহলে তারা কিছুই বুঝতদবে না, ফলে আপনার যোগাযোগ অকার্যকর থেকে যাবে। তাই শ্রোতা বা পাঠকের অবস্থা বুঝে যোগাযোগ করতে হবে।

৪. স্পষ্টতা (Clarity)
যোগাযোগের সময় বার্তা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে। ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা অদক্ষ যোগাযোগের লক্ষণ। কথা বলার সময় মূল কথায় জোর দেওয়া জরুরি। একসাথে অনেক কথা বলতে গেলে শ্রোতা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং কোনো কথাই স্পষ্টভাবে পৌঁছায় না। বরং এক সময়ে একটি বিষয় নিয়ে কথা বললে তা সহজে বোঝা যায়। বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায়ও দেখা যায় সবাই একসাথে কথা বললে নানা কথা মিশে যায়, ফলে কোন বিষয়ই স্পষ্ট আলোচনা হয় না। এজন্য স্পষ্ট করে কথা বার্তা পৌঁছানো দক্ষ যোগাযোগের লক্ষণ।

নির্দিষ্টতা (Concreteness)
যোগাযোগে নির্দিষ্টতা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমন, কেউ যদি বলে 'কাল সকালে দেখা করব', কিন্তু সময় নির্দিষ্ট না করে—সকাল ৮টা না ১১টা—তাহলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। আবার দেখা করার স্থান হিসেবে শুধু একটি ভবনের নাম বললে, কোন তলায় তা না জানালে সমস্যা বাড়ে। নির্দিষ্টতার অভাবে শ্রোতা বা পাঠকের মনে প্রশ্ন ও ভুল ব্যাখ্যার জন্ম হয়। এমনকি একই নামের একাধিক ভবন থাকলে ভুল জায়গায় পৌঁছানোর সম্ভাবনাও থাকে। তাই স্পষ্ট ও পেশাদার যোগাযোগের জন্য বার্তায় নির্দিষ্টতা অত্যন্ত জরুরি।

ভদ্রতা (Courtesy)
বার্তা যত স্পষ্ট বা কার্যকর হোক, যদি তা ভদ্র না হয়, প্রাপক সন্তুষ্ট হবে না। শ্রোতার প্রতি সম্মান দেখানো, পক্ষপাতহীন থাকা ও প্রয়োজনমতো সৌজন্যমূলক শব্দ ব্যবহার জরুরি। ভদ্রভাবে লেখা বার্তা প্রাপকের আগ্রহ বাড়ায় এবং সুন্দর প্রতিক্রিয়ার জন্য উৎসাহিত করে। 

শুদ্ধতা (Correctness)
শুদ্ধতার অর্থ হলো বার্তায় কোনো ব্যাকরণগত ভুল না থাকা। আপনার প্রতিটি বাক্য আপনাকে এবং আপনার সংগঠনকে উপস্থাপন করে। ব্যাকরণগত ভুল থাকলে আপনি যতই দক্ষ হোন, তা আপনাকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করবে এবং বার্তা গ্রহণকারীর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

উপরের যোগাযোগের এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন। বর্তমানে সুষ্ঠু যোগাযোগই প্রাপ্য সম্মান ও সাফল্য নিশ্চিত করে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!