স্কুল থেকে ফিরেই বুদ স্মার্টফোনে, হৃদরোগসহ যেসব ঝুঁকিতে শিশু
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২০ PM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২২ PM
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে স্ক্রল চলছে স্মার্টফোনে। রাতে ঘুমানোর আগে হোক, খেতে বসে বা সফরের সময়ে, রিল ও ভিডিও দেখার অভ্যাস প্রায় সবার। শিশুরাও এর বাইরে নয়। সারাক্ষণ ডুবে থাকে ভিডিও গেম অথবা ইউটিউব ভিডিওতে। এ নিয়ে আবার বড়রাও নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজ করছেন। এতেই ঘটছে বিপদ।
গবেষণা বলছে, অত্যধিক ‘স্ক্রিন টাইম’ কেবল স্থূলত্বের সমস্যা বৃদ্ধি করছে তা নয়, শিশু ও কমবয়সীদের হার্টের রোগের কারণও হয়ে উঠছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এ গবেষণা রীতিমতো উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একই ধরনের গবেষণা করেছে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলও।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ২০২৩ সাল থেকে করা কিছু সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, দুই বছর থেকে ১৯ বছর বয়স অবধি শিশু ও কমবয়সীরা বেশি মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে এত সময় কাটাচ্ছে যে, তাদের বিপাকক্রিয়ার হারে বদল আসছে। শরীরে মেদ জমার প্রবণতাও বাড়ছে।
এর হাত ধরেই ‘কার্ডিয়োমেটাবলিক’ বদল আসছে শরীরে। অর্থাৎ, সারাক্ষণ বসে বা শুয়ে মোবাইল ফোন অথবা ট্যাব দেখার কারণে শারীরিক কসরত প্রায় হচ্ছেই না। এতে ক্ষুধা কমছে, কোলেস্টেরল বাড়ছে, শরীরে রক্ত সঞ্চালনের হারও ওলটপালট হচ্ছে। ফলে একদিকে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ দেখা দিচ্ছে ছোট থেকেই। সমস্যা দেখা দিচ্ছে হার্টেও।
‘আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজি’ ও ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেশন’-এর দেওয়া তথ্য বলছে, রাতে ঘুমানোর আগে যদি শিশু বা কমবয়সীরা বেশি মোবাইল ফোন দেখে বা স্ক্রল করতে থাকে, তা হলে মেলাটোনিন নামে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। এটিই ‘স্লিপ সাইকেল’ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় এবং চাপ পড়ে শরীরে ও মনে।
এ অভ্যাসের প্রভাব পড়তে পারে স্মৃতিশক্তির ওপরেও। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা তিন-চার ঘণ্টা ভিডিও দেখে কাটালে হৃদ্রোগ ও হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়বে। যারা চার ঘণ্টায়ও বেশি মোবাইল একটানা দেখে, ভবিষ্যতে হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
ভারতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ জার্নালে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ৮৭২ জন শিশুকে নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা হয়, ছয় মাস, এক ও ২ বছর বয়সী শিশুরা যদি দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি টিভি দেখে, তা হলে তাদের মধ্যে নানান সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন শুরু আজ, জেনে নিন খুঁটিনাটি
যেমন- তারা খেলাধুলা ছেড়ে ঘরকুনো হয়ে পড়ে। অন্যের সঙ্গে কথোপকথনেও সমস্যা হয়। কিছু ভাষা শেখে যা তাদের বয়সোচিত নয়। তাদের বুদ্ধি, ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বাবা-মা ও অভিভাবকের করণীয়
ছোটরা মোবাইল ফোন, ট্যাবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেখার চেয়ে লঘু জিনিসপত্র দেখতেই ভালবাসে। জানার জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন অবশ্যই, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ হয়ে থাকলে ক্ষতি। তাই পড়াশোনা ও বিনোদনের সময় ভাগ করতে হবে। মা-বাবাকেও তা মেনে চলতে হবে ওদের সামনে।
সারাক্ষণ বসে বা শুয়ে মোবাইল ফোন না দেখে শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি করা ভালো। বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনার পক্ষেও জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। ছোটদের গল্প পড়ে শোনাতে হবে। অভিনয় করে দেখালে তারা আনন্দ পাবে। ওদের জন্য আলাদা সময় বের করে নিতে হবে। ওর জন্য দিনের নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন। শিশুর মনের কথা শুনুন, ওদের সঙ্গে খেলুন, গল্প করুন।
সামাজিক মেলামেশাও শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। মোবাইল ফোন ছেড়ে তারা যদি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলো বেশি করে, কিংবা আঁকা, লেখা বা অন্যান্য শখ তৈরি করতে পারে, তা হলে তাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।
খবর: আনন্দবাজার।