২০২৬ সালে যেসব ‘প্রযুক্তি স্কিল’ প্রয়োজন হবে শিক্ষার্থীদের

শিক্ষার্থীদের যেসকল স্কিলগুলো শেখা প্রয়োজন
শিক্ষার্থীদের যেসকল স্কিলগুলো শেখা প্রয়োজন  © এআই সম্পাদিত ছবি

নতুন ক্যালেন্ডার সামনে রাখার সময় এসে গেছে, আর মাত্র কয়েকদিন পর বিদায় নেবে ২০২৫ সাল। এবছরও প্রযুক্তিখাতে নানা পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। বিশ্ব দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং অন্যান্য পরিষেবায় প্রযুক্তি ও তথ্যনির্ভর সমাধানের চাহিদা বেড়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নগরায়ন এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সাধারণ বা গতানুগতিক স্কিল নয়, নতুন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন তরুণদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর বহুল ব্যবহার বারবার আলোচনায় এসেছে। প্রযুক্তির নতুন রূপান্তরের এই সময়ে দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আরও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। 

২০২৬ সালে বিশ্বজুড়ে কাজের ধরনে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের যে স্কিলগুলো প্রয়োজন, তা নিম্নরূপ:

১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML): AI-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, অটোমেশন, ডেটা বিশ্লেষণ সব ক্ষেত্রেই দরকার হবে। বিভিন্ন AI টুল ব্যবহারে সক্ষমতা থাকা এখন গুরুত্বপূর্ণ, এবং এমন চাকরির বিজ্ঞপ্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু সিনেমার বিষয় নয়; এটি জীবনের প্রতিটি অংশে ঢুকে গেছে। ফেসবুকের কনটেন্ট সাজেশন, Netflix-এর সিরিজ প্রস্তাব, গুগল ম্যাপের পথনির্দেশ—সবই AI-এর মাধ্যমে তৈরি হয়। আগামী ৫–১০ বছরে যারা AI-তে দক্ষ থাকবে, তারা ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে।

২. ডেটা অ্যানালাইটিকস ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন: প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ তথ্য তৈরি হচ্ছে, তাই যেকোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেটা-ভিত্তিক বিশ্লেষণ অপরিহার্য। Excel, SQL, Power BI, Tableau-এর মতো টুলে দক্ষতা থাকা এখন অত্যন্ত জরুরি। Data Analysis শিক্ষার্থীদের বৃহৎ পরিমাণ ডেটা থেকে কার্যকরী তথ্য বের করতে সাহায্য করবে। কারণ ডেটা থেকেই ব্যবসার সিদ্ধান্ত, স্বাস্থ্যনীতি এবং নির্বাচন নির্ধারিত হয়। Python বা Excel ব্যবহার করে ডেটা বিশ্লেষণ শিখলে শিক্ষার্থী তথ্য বিশ্লেষণে মাস্টার হতে পারে।

৩. ক্লাউড কম্পিউটিং ও DevOps/অটোমেশন: অনেক প্রতিষ্ঠান ক্লাউডে কাজ করছে। সার্ভার, ডিপ্লয়মেন্ট, ম্যানেজমেন্ট সবকিছু দ্রুত ও মসৃণ করতে DevOps বিশেষজ্ঞের চাহিদা বাড়ছে।

৪. সাইবার-সিকিউরিটি ও তথ্য সুরক্ষা: ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের সঙ্গে সাইবার হামলার ঝুঁকি বেড়েছে। তাই নিরাপদ ডেটা, সিকিউর নেটওয়ার্ক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫. ডিজিটাল ও ক্রিয়েটিভ স্কিল (UI/UX, ডিজাইন, কনটেন্ট ক্রিয়েশন): অনলাইন মার্কেটিং, অ্যাপ ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মিডিয়া কনটেন্টের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, কনটেন্ট ক্রিয়েশন—এই ধরনের স্কিল আগের তুলনায় বেশি প্রয়োজন।

৬. ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও অ্যাডাপ্টিবিলিটি (Soft + Cognitive Skills): প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা পরিচালনার ক্ষমতা অটোমেশনে করা যায় না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যুক্তি-ভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ, গভীরভাবে ভাবা, নেতৃত্ব এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ইউটিউবে স্ক্রিন বন্ধ রেখে গান শুনবেন যেভাবে

৭. কমিউনিকেশন ও মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি চিন্তাভাবনা: গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়, ভালো যোগাযোগ দক্ষতাও প্রয়োজন। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট জব বা বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য। একমাত্রিক চিন্তাভাবনা যথেষ্ট নয়, চিন্তাভাবনায় হতে হবে বহুমাত্রিক।

৮. ভিডিও এডিটিং: ভিডিও কনটেন্ট বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়। যারা ভিডিও তৈরি ও এডিটিং জানবে, তারা কনটেন্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সক্ষম হবে। চাকরি খুঁজছেন? ভিডিও CV বানান। শিক্ষক? ভিডিও লেকচার তৈরি করুন। ক্রিয়েটর? Reels, Shorts বা YouTube ভিডিও বানান। ভিডিও এডিটিং চাহিদা বাড়ছে।

৯. লীডারশিপ: নেতৃত্ব মানে শুধু বস হওয়া নয়। দায়িত্ব নেওয়া, সাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করা—এগুলো লীডারশিপের অংশ। প্রতিষ্ঠান, পরিবার বা দলের জন্য নেতৃত্বের দক্ষতা অপরিহার্য।

১০. টিমওয়ার্ক: একসাথে কাজ করতে না পারলে সফলতা আসে না। ভালো টিম জানে কখন কথা বলতে হবে, কখন শুনতে হবে। টিমে কাজ করতে শেখা শিক্ষার্থীদের যেকোনো বড় প্রজেক্টে মূল্যবান করে তোলে।

১১. পাবলিক স্পিকিং: নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা সবার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেন্টেশন, ক্লাসরুমে আলোচনা বা স্টুডেন্টদের সামনে বক্তৃতার জন্য পাবলিক স্পিকিং স্কিল অপরিহার্য। স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারলে ইন্টারভিউ, মিটিং বা সেমিনারে উপস্থিতি আলাদা হবে।

১২. ম্যানেজমেন্ট স্কিল: সময়, প্রজেক্ট ও কাজের অগ্রাধিকার ঠিকভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনা করে চলতে পারলে লক্ষ্য দ্রুত অর্জন করা সম্ভব।

১৩. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (EQ): EQ মানে নিজের ও অন্যের অনুভূতি বোঝা এবং সম্পর্ক তৈরি করা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ, চাপ সামলানো এবং অন্যের অবস্থান বোঝার ক্ষমতা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে।

১৪. প্রবলেম সলভিং স্কিল: বক্সের বাইরে চিন্তা করতে পারা, নতুন প্রজেক্টের জন্য কার্যকর সমাধান বের করা—এই স্কিল অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। সমস্যা সমাধান দক্ষতা শিক্ষার্থীদের যেকোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে রাখবে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
আইটি-সেক্টরে যেতে চাইলে Python, SQL, Cloud (AWS/Azure), Cybersecurity, Data Tools ব্যবহার শিখুন। ডিজাইন, মিডিয়া, কনটেন্ট বা ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে UI/UX, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও কনটেন্ট রাইটিং স্কিল বাড়ান। নিজের ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতে সাবলীল যোগাযোগ, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান ও সময় ব্যবস্থাপনা তৈরি করুন। অনলাইন কোর্স, প্রজেক্ট-ভিত্তিক কাজ, ইন্টার্নশিপ বা ফ্রিল্যান্স প্রজেক্টের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। চাকরির বাজার বদলাচ্ছে, প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, কিন্তু শেখার অভ্যাস থাকলে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence