সেমিস্টার ড্রপ থেকে প্রশাসন ক্যাডার—মাভাবিপ্রবির মামুনের দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প
- সুজন চন্দ্র দাস, মাভাবিপ্রবি
- প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৬ PM
অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ‘সেমিস্টার ড্রপ’ মানে থেমে যাওয়া, পেছনে পড়ে যাওয়া কিংবা হতাশার গভীরে তলিয়ে যাওয়া। তবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা আল মামুন সেই ব্যর্থতাকেই জীবনের বড় ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগে পরিণত করেছেন। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে তিনি ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন।
মির্জার শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহ শহরের সরকারি কোয়ার্টারে—সরকারি চাকরিজীবী বাবার কর্মস্থলেই বেড়ে ওঠা। বড় ভাই-বোনের অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। তবে ক্লাস থ্রিতে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি না হওয়া ছিল জীবনের প্রথম ব্যর্থতার তীব্র ধাক্কা। সেখান থেকেই শুরু হয় তার কঠিন ‘শিক্ষা যুদ্ধ’। এসএসসি (২০১১) ও এইচএসসি (২০১৩) উভয় পরীক্ষায় জিপিএ–৫ অর্জন করে তিনি ভর্তি হন ২০১৪–১৫ শিক্ষাবর্ষে মাভাবিপ্রবির আইসিটি বিভাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দুই সেমিস্টারের ফল ভালো হয় না। কিন্তু যা ঘটল দ্বিতীয় বর্ষে; তা তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। তিনি সেমিস্টার ড্রপ করেছিলেন। এই সময়টিই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়। বন্ধুরা, সহপাঠীরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তিনি তখন পিছিয়ে পড়েছেন; এমন বাস্তবতা মানা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। রিঅ্যাডমিশন নিয়ে জুনিয়রদের সঙ্গে ক্লাস শুরু করেন। নতুন করে বন্ধুহীন পরিবেশ, নতুন মুখ, নতুন লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি কঠিন ছিল। তবে সিনিয়র–জুনিয়রদের সহায়তা এবং নিজের দৃঢ় মানসিকতায় তিনি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ান।
শেষ পর্যন্ত সেমিস্টার ড্রপ থেকে উঠে এসে তিনি ২.৭৯ সিজিপিএ নিয়ে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেন; এটিই ছিল তার প্রথম বড় প্রত্যাবর্তন।
আরও পড়ুন: দুই দিনে রেমিট্যান্স এল ১,৯৭৯ কোটি টাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রাকেশের (সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার) মাধ্যমে বিসিএসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। প্রথম দুবার প্রিলিমিনারিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সেমিস্টার ড্রপ পার করা মানুষের কাছে ব্যর্থতা নতুন কিছু ছিল না; তিনি আবারও লড়াই চালিয়ে যান। তৃতীয়বার সুযোগ পান ৪৫তম বিসিএসে লিখিত দেওয়ার। পাশে ছিল বন্ধু নেয়ামুল কবির উৎস (৪৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারপ্রাপ্ত) এবং ডা. অন্তিম হাসানের পরামর্শ।
পরীক্ষা দিয়েই ক্যাম্পাস ছেড়ে ঢাকায় উঠে নীলক্ষেতের ‘কনফিডেন্স’ কোচিংয়ের পরীক্ষা ব্যাচে ভর্তি হয়ে প্রতিদিন ৫-৬ ঘণ্টা নিয়মিত পড়াশোনা করতেন তিনি। রিটেনের আগে বাড়ান প্রস্তুতির সময়। পাশাপাশি ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতিও চলছিল। সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার হিসেবে যোগদানের অপেক্ষায় থাকতেই প্রকাশিত হয় ৪৫তম বিসিএসের ভাইভা ফলাফল—আর সেই তালিকায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার নাম। তিনি নির্বাচিত হন প্রশাসন ক্যাডারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সাফল্য শুধু আমার নয়, আমার মায়ের দোয়া, ত্যাগ আর আশা আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেমিস্টার ড্রপ বা ব্যর্থতা—কোনো কিছুই আপনার সফলতার পথ থামিয়ে দিতে পারে না, যদি আপনি নিজে থেমে না যান। ভুল হলেও শিখতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে, নিয়মিত পড়তে হবে, ধৈর্যই বিসিএস প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় শক্তি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের সেবা করা, মানুষের কাজে আসা এবং পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা—এটাই আমার লক্ষ্য।’