সাইকেল মেকানিকের ছেলে আশিক এখন বিসিএস ক্যাডার
- পাবনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৭ AM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৮ AM
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার সন্তান মো. আশিকুর রহমান। তার এই সাফল্যের পেছনে তার বাবা আর ভাই এর অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার বাবা সাইকেল মেকানিকের কাজ করে তাকে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। বিসিএসে ভালো ফলাফল করতে আশিকের পরামর্শ—সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। নেগেটিভ কোনোকিছু মাথায় আনা যাবে না।
আশিক পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম-মৃত আলেয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। চার ভাই আর এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি।
আলাপকালে আশিক জানান, তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেশকিছু দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলতো। আর আমাদের ভাইবোনদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। তখন বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। কখনও মায়ের তাকে অভাব বুঝতে দেননি।
‘আমার সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার। সাইকেল মেরামতের কাজ করে আমার সব খরচ যুগিয়েছেন। কোনো অভাব রাখেননি। মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। আর একজন আমার মেজ ভাই আমিরুল ইসলাম সবুজ। ডিপ্লোমা শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে যান অভাবী সংসারের হাল ধরতে। নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এই দুইজন মানুষ আমার সাফল্যের পেছনে মূল কারিগর।’
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেন তিনি।
তারপর থেকেই বিসিএস এর প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকুরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিক। ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। আর এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আশিক।
এই সাফল্যের পেছনে কার অবদান জানতে চাইলে আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমার সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার। সাইকেল মেরামতের কাজ করে আমার সব খরচ যুগিয়েছেন। কোনো অভাব রাখেননি। মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। আর একজন আমার মেজ ভাই আমিরুল ইসলাম সবুজ। ডিপ্লোমা শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে যান অভাবী সংসারের হাল ধরতে। নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এই দুইজন মানুষ আমার সাফল্যের পেছনে মূল কারিগর।’
বাবার সঙ্গে ভাল লাগার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে আশিক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। আবার আমি খুব দুরন্তপনা ছিলাম। বাবা সারাদিন কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরতেন। আমার যেদিন শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতো তখন কীভাবে যেন তিনি টের পেতেন। তখন সরিষার তেল আর রসুন দিয়ে গরম করে আমার বুকে মালিশ করে দিতেন বাবা। আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।’
আশিক আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে বাবাকে কখনও কিছু ভুলে যেতে দেখিনি। খাতা, কলম যখন যেটা যে নামের আনতে বলতাম তিনি ঠিকই নিয়ে আসতেন। তিনি বাড়ির অনেক কিছু আনতে ভুলে গেলেও, আমার লেখাপড়ার কোনো জিনিস আনতে তাকে কখনও ভুলে যেতে দেখিনি। এটা আমার খুবই অবাক লাগে।’
বিসিএস প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। আর নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারবোই, আমাকে পারতেই হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।’
বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন এ পরিচয় দিতে কখনও দ্বিধা বা সংকোচবোধ করেন না আশিক। তাই দেশের জন্য, দরিদ্র মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান এই তরুণ। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।