প্রশাসন ক্যাডার মজিবুর কোনো রুটিন মানেননি, করেননি কোচিংও

মজিবুর রহমান
মজিবুর রহমান  © টিডিসি ফটো

৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মজিবুর রহমান। দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া মজিবুর টিউশন করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। কর্মজীবনে এসে পেয়েছেন একাধিক সাফল্য। ৪৩তম বিসিএসের আগে তিনি ব্যাংকেও চাকরি পেয়েছিলেন। তবে তিনি চাকরি প্রস্তুতিতে কোনো রুটিন মেনে পড়ালেখা করেননি। আর্থিক সংকটে কোচিংও করা হয়নি তার।

মজিবুরের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডোমনমারাতে। তার বাবা প্রয়াত জলিল মিয়া। মজিবুর তার মাধ্যমিক খিদিরপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং উচ্চমাধ্যমিক নরসিংদী মডেল কলেজ থেকে শেষ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ১২৯তম স্থান অর্জন করে ২০১৫-১৬ সেশনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে।

পড়ালেখা শেষে তার প্রথম চাকরি হয় কৃষি ব্যাংকের অফিসার জেনারেল পদে। পরবর্তীতে তিনি ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে নন ক্যাডার হয়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর সবশেষ প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ৬৭তম স্থান অর্জন করেন।

নিজের সাফল্য নিয়ে জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছি। ব্যাংকের কলিগ ভাই এবং এক বন্ধুরা এডমিট কার্ড ও রেজাল্ট শিট মিলিয়ে দেখেছে যে, এডমিন ক্যাডারে আমার মেধাক্রম ৬৭তম। কয়েক মিনিট আমার অনুভূতি কেমন ছিল এটা বর্ণনা করা সম্ভব না।  পিএসসির আট ডিজিটের একটা রেজিস্ট্রেশন নম্বর মানুষের পরিচয় পাল্টে দেয়।

বিসিএস প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন রুটিন মেনে পড়িনি। যতক্ষণ মনোযোগ থাকতো এবং ভালো লাগত ততক্ষণই পড়েছি। অযথা সময় নষ্ট করতাম না। সাত ঘণ্টা টিউশন করার পর নিজের পড়ার সময় বের করাই টাফ ছিল। কোনো কোচিংও করিনি। অনলাইন/অফলাইন কোথাও মডেল টেস্টও দিইনি।

তিনি বলেন, আমি গরীব পরিবারের সন্তান। অর্থনৈতিক এবং মানসিক সাপোর্ট ছিল না বললেই চলে। নিজেই টিউশন এবং বিভিন্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি। সলিমুল্লাহ হল থেকে মতিঝিল এবং আবার সেখান থেকে পিলখানা। টিউশন থেকে এসে কিছুক্ষণ মোবাইল চাপাচাপি করে আবার রিডিংরুমে যেতাম। কৃষি ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি পাওয়ার পরেও ১৪ দিন টিউশন করেছি। কোচিং করার ইচ্ছা এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য কোনোটাই আমার ছিল না। 

বিসিএসের জন্য কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোচিং করাটা জরুরি কিছু না। আপনি নিজে গুছিয়ে পড়তে পারলে কোচিং করার দরকার নাই। আর যদি আপনার টাকা ও সময় থাকে এবং নিজে নিজে গুছিয়ে পড়তে না পারেন তাহলে কোচিংয়ে যেতে পারেন।

তিনি বলেন, মডেল টেস্ট দেওয়া না দেওয়া এটা আপনার বিষয়। অনেকেই টাইম মেনটেইন করার অনুশীলন হিসেবে মডেল টেস্ট দেন। আমি প্রিলি, রিটেন ও ভাইভার জন্য কোনো মডেল টেস্ট বা মক ভাইভা দিইনি। কারণ আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে যেটা আমি পারি সেটা আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করতে পারব।

প্রিলি-রিটেন-ভাইভার পৃথক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, আমার রিটেনে বাংলা, গণিত, মানসিক দক্ষতা খারাপ হয়েছিল। যদিও ৪৩তম বিসিএসে ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থীর গণিত পরীক্ষা এমনই হয়েছে। কারণ গণিতের প্রশ্ন অদ্ভুত টাইপের ছিল। গণিতের ঘাটতি বিজ্ঞান দিয়ে এবং বাংলার ঘাটতি ইংরেজি দিয়ে কভার দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ইংলিশ ভার্সনে অনার্স ও মাস্টার্স করায় ইংরেজিকে কখনো ভয় পাইনি। ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়ার সময় ফ্রিহ্যান্ড রাইটিংয়ের অভ্যাস হয়েছিল। বোনাস পয়েন্ট ছিল আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, নিজের ডিপার্টমেন্টের বিষয়। তাই স্বাভাবিকভাবে এটাতে ভালো লিখেছিলাম।

ভাইভা অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাইভাতে আমার লাক ফেভার করেছিল। ফরেন চয়েজে রাখিনি, তবুও  ভাইভা বোর্ড  ৯০ শতাংশ প্রশ্ন ইংরেজিতে করেছিলেন। একটা প্রশ্ন ছাড়া বাকিগুলো মোটামুটি বলতে পেরেছিলাম। ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।

মজিবুর রহমান নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে চাই। জনগণের একজন সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। সমাজের পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্র মানুষের জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence