ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যু : আন্দোলনে সব ছাত্র সংগঠনের একাত্মতা
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৫ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় হয়েছে বলছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন। সোমবার (২১ জুলাই) প্রতিবেদনের তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই একে সুস্পষ্ট হত্যা বলে অভিহিত করে হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেল চারটার শিডিউলের বাস আটকে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়াসহ ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠন।
শাখা ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, ‘যেদিন শুনেছি লাশ পাওয়া গেছে, সেদিন থেকেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিন দিন গেলেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসন এব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিক। আমরা ইসলামী ছাত্রশিবির এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সাজিদ হত্যার দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে না, ততক্ষণ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সবাইকে আহ্বান জানাই, আপনারা মনে করবেন, সাজিদ আপনার ভাই, শিক্ষক-কর্মকর্তারা মনে করবেন, সাজিদ আপনার সন্তান। সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব।’
আরও পড়ুন: বিমানটি স্কুল ভবনের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, ‘আমরা কেউ নিরাপদ না। আজকে সাজিদ গেছে, কাল আমিও যেতে পারি। যত বিচার না হয় ক্যাম্পাস শাটডাউন করে দেওয়া হবে। ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। কীভাবে রাত সাড়ে তিনটায় হত্যা হয়, তার জবাব আমরা চাই। কোন কালো হাতকে আমরা এই ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। আমরা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।’
সহসমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘যদি সাজিদ রাত সাড়ে তিনটায় মারা যেয়ে থাকে, তাহলে হলে ছিল কি না, তা জানতে হবে। কল রিসিভ করল কে, রুমের তালা আগের দিন দেখা গেলেও পরের দিন ইনসান যখন যায়, তখন তালা পাওয়া গেল না কেন, সেসব প্রশ্ন জানতে হবে। আমরা কেউই কোনো সংগঠনের প্রতিনিধি না, সাজিদের ভাই হিসেবে এখানে অংশগ্রহণ থাকবে। সাজিদের মৃত্যুকে সহজভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের চাওয়া পূরণ না হলে প্রতিটি একাডেমিক ভবন, হল, ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুর উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে আমি এখানে এসেছি। আমার ভাই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। সাজিদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের অবহেলা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বারবার রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে। কোনো স্বাভাবিক মানুষ অবশ্যই রাত তিনটায় গোসল করার জন্য পুকুরে যেতে পারে না। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এর সুরাহা করেন। প্রশাসন সব সময় যা করে এবারেও অবহেলার মাধ্যমে সাজিদ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন, সাজিদের হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে আমাদের সামনে তুলে ধরুন, না হ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর মিছিল, হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরে আলম বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটায় যেহেতু সাজিদের মৃত্যু হয়েছে। তাই একে কোনোভাবেই আর স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যায় না। আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে। অথচ ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও আমাদের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নিজেদের খবর নিতে হচ্ছে, প্রশাসন আমাদের কিছু জানায় নেই। একজন শিক্ষার্থী রাত তিনটায় খুন হলো প্রশাসন কিছু জানে না। এভাবেই আমাদের ভাইরা খুন হবে আর প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে, তা আমরা বরদাশত করব না। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।’