প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৫ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৪ PM
প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে অবরোধ করেছে মহিপালের আলহাজ্ব কোব্বাদ আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে এক ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যায়।
এ সময় ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও দাবি শোনেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত চলাকালে প্রধান শিক্ষককে ছুটিতে পাঠিয়ে বিকল্পভাবে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- বছরের মাঝপথে রুটিন পরিবর্তন করা যাবে না, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার করতে হবে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহার করে নতুন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে (শর্ত হলো তারা স্কুলের বর্তমান শিক্ষক হবেন না এবং ফেনীর বাসিন্দা হওয়া যাবে না) এবং মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বছরের মাঝে হঠাৎ করে রুটিন পরিবর্তন করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করা হচ্ছে। যে বিষয়ের শিক্ষক আছেন, তাদের দিয়ে সে বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হয় না। দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। ২০২৫ সালের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে ৯০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায় করা হলেও তার কোনো হিসাব নেই। বিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা হয়, প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়। স্কুল ভবন রাতের বেলায় ভাড়া দেওয়া হয়, পানির ট্যাংক প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি লাইব্রেরির টেলিভিশনও তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি জানিয়ে মাঠে নেমেছি। প্রশাসন ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছে। যদি আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মানা না হয় আমরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিব।
মোহাম্মদ সবুজ নামে প্রতিষ্ঠানের এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অনুজরা যে দাবিগুলো তুলেছে, তার সঙ্গে আমরা একমত। এসব দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকার গুণীজনদের নিয়ে নিয়মিত সভার আয়োজন করে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক একেএম জহির উদ্দিন কচি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিআরসি থেকে বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ১০ম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নতুন শিক্ষককে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আগের শিক্ষককে রাখতে চাইছিল। এ নিয়েই আন্দোলন শুরু হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানান।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের চার দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। তবে প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা কান্তা, বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।