বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক তিনি, ২০ বছরেও দেখেননি কেউ
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ AM , আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৫১ AM
যশোরের মনিরামপুরে এক বিদ্যালয়ে মো. বদরুজ্জামান নামে এক শিক্ষককে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়োগ ক্ষেত্রে সাবেক প্রতিমন্ত্রী, দুই প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুই সভাপতিসহ নিয়োগ বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করা হয়।
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) নিয়োগ দেখানো হয় বদরুজ্জামানকে। কিন্তু নিয়োগের ২০ বছর পরও তিনি এক দিনও স্কুলে আসেননি। প্রধান শিক্ষক তাপন কুমার পাইন ছাড়া শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী তাকে চেনে না। এই জাল-জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সবাই জানতে পারেন। এতে স্কুল এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৪ সালে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। প্রধান শিক্ষক ছিলেন মো. ইনছার আলী। তারা দায়িত্বে থাকাকালীন বদরুজ্জামান নামে কোনো সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। অথচ ২০ বছর পর এসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়। ফলে বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনকে নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কথিত শিক্ষক বদরুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে আনা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি এ কারণে ক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষক তাপন কুমার পাইনকে বিদ্যালয়ে দুই দফা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, বদরুজ্জামানকে নিয়োগ দেখাতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ইনছার আলী ও সাবেক দুজন সভাপতি স্বাক্ষর জাল করার ঘটনা ঘটেছে। এ দুই সভাপতির মধ্যে একজন রয়েছেন, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। অপরজন হলেন বিজয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ঝন্টু পাটোয়ারী। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ডের অপর প্রধান শিক্ষক সদস্য করা হয়েছে উপজেলার সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মৃত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ এবং প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে। এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে নিয়োগকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার গোপিকান্তপুর গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে মো. বদরুজ্জামান বাবুকে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ‘খ’ শাখায় সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেখানো হয়। যোগদান দেখানো হয় ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি চার দিন আগেই এ যোগদানের অনুমোদন দিয়েছে।
অবশ্য এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইনছার আলী। তিনি দাবি করে বলেন, আমার ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে বদরুজ্জামান বা বাবু নামে কাউকে বিজয়রামপুর স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমনকি আমার করা স্বাক্ষর নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটা আদৌ সত্য নয়। তবে যতটুকু শুনেছি বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও কতিপয় ব্যক্তি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে একজন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে তার এমপিওভুক্তি করেছে। বর্তমানে তাকে বিদ্যালয়ে ওঠানোর চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, কথিত শিক্ষক বদরুজ্জামানকে কখনোই স্কুলে আসতে দেখেননি এবং তার নিয়োগ সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা। অথচ ২০২৪ সালের ১০ জুলাই এক রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে অষ্টম শ্রেণির ‘খ’ শাখা থেকে মূল প্যাটার্নে পদায়ন করে একই রেজুলেশনের তার এমপিওভুক্তির সুপারিশ পাঠানো হয়। অথচ বেতন-বিলের সুপারিশকারী তৎকালীন সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
সাবেক সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারী জানান, সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন মো. বদরুজ্জামান নামে কোনো শিক্ষক স্কুলে ছিল না। তার রেজুলেশনে আমার স্বাক্ষর কীভাবে এল, এটা আমার জানার বাইরে।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বদরুজ্জামানকে শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের আদিষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের মুঠোফোনে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম বজলুর রশিদ জানান, নিয়োগটি অনেক আগের। যে কারণে যাচাই-বাছাই করার কোনো সুযোগ হয়নি। পত্রিকায় এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, উপজেলা থেকে যেভাবে আসছে, সেভাবে ফাইলটি ডিজি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে বিষয়টি এখন খুব গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।