এইচএসসি পেরোনোর আগেই অক্সফোর্ডে

আহমেদ ইত্তিহাদ
আহমেদ ইত্তিহাদ  © টিডিসি ফটো

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর এখনো ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করার সুযোগ হয়নি। তবে আমার কাছে এর চেয়েও বড় দুঃখের ব্যাপার হলো, এখানে এখন কনকনে ঠাণ্ডা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার বইপুস্তক, জামাকাপড়ের সঙ্গে ঢাকার উষ্ণতাও খানিকটা ব্যাগে ভরে আনতে পারলে মন্দ হতো না।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও বৃহস্পতিবার অনেকটা অলস সময় কাটে। তাই আজ (বৃহস্পতিবার) অনেক কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এখনো ভাবলে অবাক লাগে, অল্প কদিনের ব্যবধানেই ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র থেকে অক্সফোর্ডের ছাত্র হয়ে গেলাম! যদিও এখানে ভর্তির জন্য বছরখানেক ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে ঢাকার একটি স্কুলে বসে ভর্তি পরীক্ষা দিই। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডিসেম্বরে দিলাম মৌখিক পরীক্ষা।

এরপর গত জানুয়ারি মাসে চূড়ান্তভাবে ফল প্রকাশিত হলো। মজার ব্যাপার হলো, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়েই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম। মূলত অক্সফোর্ডে আমাদের দেশের এইচএসসি পরীক্ষাকে গ্রহণ করা হয় না। তাই আমি ভর্তি পরীক্ষার আগেই উচ্চমাধ্যমিকের সমমান হিসেবে স্যাট (স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট) সম্পন্ন করেছিলাম। আর ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর টোয়েফল সম্পন্ন করি।

টিউশন ফি নেহাত কম নয়। তাই রিচ অক্সফোর্ড স্কলারশিপের জন্য আবেদন করলাম, পেয়েও গেলাম। এখন এই বৃত্তির অধীনে সম্পূর্ণ বিনা খরচে অক্সফোর্ডের ম্যানসফিল্ড কলেজে গণিতে স্নাতক করছি। হোস্টেলে থাকা ও খাওয়ার খরচও বিশ্ববিদ্যালয়ই বহন করছে।

সহজ ছিল না
এতদূর পর্যন্ত লেখাটা পড়ে কেউ ভাবতে পারেন—বাহ, কী সহজ! পরীক্ষা দিলাম আর অক্সফোর্ডে টিকে গেলাম! বাস্তবে কিন্তু তা নয়। মুদ্রার উল্টো পিঠ আমাকেও দেখতে হয়েছে। অক্সফোর্ডের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলাম। তবে আমি কখনো হতাশ হইনি। আমার অনেক পরিচিত বড় ভাইয়া-আপুরা বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। যেগুলো পরবর্তী সময়ে অক্সফোর্ডে সুযোগ পেতে সাহায্য করেছে।

গণিত উৎসবই সাফল্যের বীজ
আমার বড় বোন অ্যাভেলিনা রহমানের কাছে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড সম্পর্কে জেনেছিলাম। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আর আমার বোন তখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী। বোনের কাছেই গণিত উৎসবের জন্য অনুশীলন শুরু করলাম। প্রথমবার আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে ফার্স্ট রানারআপ হলাম। পরের বছর প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নসের পুরস্কার পাই। এরপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলাম। তাই গণিত অনুশীলন ছেড়ে দিই। ফলও পাই হাতেনাতে। প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপেই বাদ পড়ে যাই পরের বছর। এরপর আবার কোমর বেঁধে নামি আমি। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হই চারবার। ২০১৯ ও ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছি। এ বছর পেয়েছি রৌপ্যপদক।

আমি মূলত একাই অংক করতাম। অলিম্পিয়াডের আগের বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে অনুশীলন করতাম। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতেন, তাঁদের সঙ্গে বেশ ভালো যোগাযোগ ছিল আমার। গাণিতিক কোনো সমস্যায় পড়লে তাঁদের সাহায্য নিতাম। এ ছাড়া গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশিক্ষক ও আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও অনেক সাহায্য করেছেন। গণিত অলিম্পিয়াডের এই অনুশীলনগুলোই ছিল অক্সফোর্ডে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমার একমাত্র প্রস্তুতি।

ছোটবেলা থেকেই আমি গণিত নিয়ে পড়তে চাইতাম। ক্লাসের পড়ার বাইরে অলিম্পিয়াডের অংকগুলো ছিল আমার কাছে নেশার মতো। গল্পে-গল্পে গাণিতিক সমস্যা দেওয়া থাকত। এগুলোর সমাধান বের করতে দারুণ লাগত। বড় হয়ে ডাক্তার বা প্রকৌশলী হতে হবে—এমন কোনো লক্ষ্য মা-বাবা আমার সামনে কখনো দিয়ে দেননি। পরীক্ষায় অনেক ভালো ফল করতে হবে, সেই চাপও ছিল না। আমার যা করতে ভালো লাগে, যা পড়তে ভালো লাগে, সেটিই বেছে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তাঁরা।

যেমন যাচ্ছে নতুন জীবন
ক্লাস শুরুর আগেই কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হোস্টেলে থাকতে বলা হয়েছিল। তবে ভিসা জটিলতার কারণে আমি ১০ অক্টোবর পৌঁছেছি। ১২ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস হলেও আমাকে ম্যানসফিল্ড কলেজের হোস্টেলেই থাকতে হচ্ছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় কোনো ক্যাম্পাস নেই। ৩০টি কলেজের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে ক্লাসের লেকচারের বাইরেও হাউস টিউটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

প্রতিটি বিষয়ের জন্য একজন করে শিক্ষক তিনজন শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে পড়ান। এই ক্লাসগুলো সামাজিক দূরত্ব মেনে কলেজের সেমিনারকক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি সাধারণত লাইভ ক্লাসগুলো করি না। নিজের সুবিধামতো লেকচারের ধারণকৃত ভিডিওগুলো দেখি। তবে গত কয়েক দিনে এখানে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। ফলে আবারও লকডাউন শুরু হয়েছে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন বের হওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে হাঁটতে বের হই। পরের সেমিস্টারে ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করতে পারব, এই আশাতেই এখন দিন গুণছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence