বিশ্বভারতীতে পড়বেন?

১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। এই  বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রাক্তনীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী সত্যজিৎ রায়, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দেশবিদেশ থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে আসেন। পড়তে পারেন আপনিও। চলুন সে বিষয়েই জানা যাক-

দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্যহীন ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতির দায়ে উপাচার্য সুশান্ত দত্ত গুপ্তকে অপসারণ করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ আড়াই বছর। এ সময় বিশ্বভারতীর অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রবীণতম ডিরেক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী সবুজকলি সেন। গত ৮ অক্টোবর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে সাম্প্রতিক তথ্য এটাই।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনেনি, এমন ছাত্র-ছাত্রী হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সংস্কৃতি শিক্ষার মাধ্যমে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সাধন করা। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতীয় উপমহাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যার ১৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারত সরকারের আইন অনুযায়ী এবং হোস্টেলের সীট থাকা সাপেক্ষে ভর্তির আবেদন বিবেচনা করা হয়। 

বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এখানে উচ্চশিক্ষার যেসব পর্যায়ে পাঠদান করা হয় সেগুলো হচ্ছে:
- আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম
- পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম
- ডক্টরেট প্রোগ্রাম (PhD)
- ১ বৎসর মেয়াদী বিশেষ প্রোগ্রাম

কোর্সসমূহ
বিশ্বভারতীতে যেসব কোর্সে পাঠদান করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
বিএ (অনার্স): বাংলা, অর্থনীতি, হিন্দী, ভূগোল, দর্শন, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃত, সমাজবিদ্যা, পরিসংখ্যান, কৃষি, উদ্ভিদ বিদ্যা, রসায়ন, গণিত, পদার্থ বিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, বায়োটেকনোলজি। 
নিচের বিষয় গুলোতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয়
- চায়নীজ ভাষা শিক্ষা
- জাপানীজ ভাষা শিক্ষা
- উর্দু ভাষা শিক্ষা
- হিন্দী
- সংস্কৃত

১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর কবিগুরুর মনে এই স্বপ্ন উঁকি দেয়। 

আবেদনের নিয়ম
বিশ্বভারতীতে কোনো কোর্সে ভর্তির আবেদন করার পূর্বে আগ্রহী শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ঐ কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে এমনভাবে আবেদন করতে হবে যেন এপ্রিল মাসের ভেতরে সবধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয় এবং যেন তারা আগস্ট মাসে কোর্স শুরু করতে পারে।

আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্বভারতী ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারবে। এছাড়া বছরের যেকোন সময় বিশ্বভারতীয় ডেপুটি রেজিষ্ট্রার (শিক্ষা ও গবেষণা) এর দপ্তর থেকে বিনামূল্যে এই ফর্ম পাওয়া যেতে পারে।

বিদেশি শিক্ষার্থীরা পূরণকৃত আবেদনপত্র ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা ও গবেষণা) এর বরাবর জমা দিবে অথবা ইমেইল করবে। যদি আবেদন ফর্ম ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা হয় তবে তা জমা দেয়ার সময় অবশ্যই ১০ মার্কিন ডলারের ব্যাংক ড্রাফট ‘বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন এর অনুকূলে সংযুক্ত করতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
- আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে।
- পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা হচ্ছে ২য় শ্রেণির স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি
- বিদেশি শিক্ষার্থীদের ১ বৎসর মেয়াদি কোর্সের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট।

এছাড়া এসব কোর্সে ভর্তির জন্য বিষয়ভিত্তিক আনুষঙ্গিক অন্যান্য কিছু শর্তও পূরণ করতে হবে।  বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার ও সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই ভারত সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। কোন সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুপারিশকৃত অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশেষ কোনো গবেষণা কর্মসূচি যদি বিশ্বভারতী কর্তৃক গৃহীত হয় সেক্ষেত্রে গবেষণা সুবিধাদি এবং নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
মেধাভিত্তিক ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা বৃত্তিও প্রদান করা হয়। প্রি-ডিগ্রি, আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই বৃত্তি প্রযোজ্য। এছাড়া কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।

বিশ্বভারতীতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে বাৎসরিক টিউশন ফি হল-
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স- ৬০০-৯৫০ মার্কিন ডলার
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স- ৭০০-১০০০ মার্কিন ডলার

জানা যায়, প্রতিবেশী ২টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচিয়তা একজন তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভালবাসার টানে এ কারণেই অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাই ছুটে যায় রবি ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে। রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে। প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্ন থেকেই শৈলজারঞ্জন মজুমদারসহ অনেক বাংলাদেশির নাম এর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত আছেন। 

আরো জানতে ভিজিট করতে পারেন http://www.visvabharati.ac.in/


সর্বশেষ সংবাদ