ডলার সংকটে বিদেশগামী শিক্ষার্থীরাও বিপাকে

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা   © সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্ধলাখ শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে যায়। দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ পাঠানোর জন্য এজন্য ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের একটি ফাইল খুলতে হয়। ডলারের উচ্চ দাম ও চলমান ডলার সংকটের কারণে এ সংক্রান্ত নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক। এতে করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বিদেশগামী উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ডলার পাঠাতে না পারায় অনেকেরই ভর্তি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। 

বিভিন্ন ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্টুডেন্ট ফাইল খোলার দিক থেকে সামনের সারিতে থাকা ব্যাংকগুলোর বছরে ২-৩ কোটি ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে হচ্ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া একজন ছাত্রের জন্য প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার ডলার পাঠাতে হয়। নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার দায় বাড়াতে চাইছে না ব্যাংকগুলো তাই বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈধ পথ বন্ধ হয়ে গেলে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে ডলার পাঠানো উৎসাহিত হবে। বিদেশগামী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে। 

আরও পড়ুন: সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এক ঢাবিতেই অধ্যাপক বেশি

কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেছিলেন ইকবাল হোসেন। দুই বছরের বেশি সময়ের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। দীর্ঘ পরিশ্রমের চেষ্টায় ভর্তির নিশ্চয়তাও পেয়েছেন। তবে ডলার সংকটের কারণে ইকবাল হোসেন এখন ব্যাংকে ফাইল খুলতে পারছেন না। জানতে চাইলে এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘পাঁচটা ব্যাংকে গিয়েও স্টুডেট ফাইল খুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা করেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য ফাইল খোলায় অগ্রগামী ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম, প্রিমিয়ার ও সাউথইস্ট, ইস্টার্ন, ব্র্যাক, দ্য সিটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট (এমটিবি)। বেসরকারি খাতের আরো এক ডজনের মতো ব্যাংক এসব ফাইল খোলে। তবে ডলার সংকটের কারণে সম্প্রতি প্রায় সব ব্যাংকই এসব ফাইল খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু ব্যাংক এখনো চালু রাখলেও প্রভাবশালীদের তদবির লাগছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য ইস্টার্ন, ব্র্যাক, ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংকে তারা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কেউই রাজি হয়নি। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে তাদের অনেকে হুন্ডিকেই বেছে নিচ্ছেন। 

বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের জন্য গত বছর ৫ হাজার ৩৯০টি ফাইল খুলেছিল। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটি খুলেছে ৭ হাজার ৮৪০টি নতুন ফাইল। তবে গত মাসের শেষের দিক থেকে নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘দেশে এখন ডলারের তীব্র সংকট চলছে। এ কারণে আমরা আপাতত নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি। বিদ্যমান বা পুরনো যেসব ফাইল খোলা হয়েছিল, সেগুলো সচল রাখা হয়েছে।’

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়েছেন উচ্চশিক্ষা নিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটিতে গিয়েছেন ৮ হাজার ৬৬৫ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ৫৪৮, অস্ট্রেলিয়ায় ৫ হাজার ৬৪৭, কানাডায় ৫ হাজার ১৩৬, জার্মানিতে ৩ হাজার ৯৩০, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১৯৪, ভারতে ২ হাজার ৭৫০, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ১৭৬ ও সৌদি আরবে ১ হাজার ১৬৮ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গত বছর উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছেন। দিন দিন এ সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence