সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এক ঢাবিতেই অধ্যাপক বেশি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লোগো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লোগো   © টিডিসি ফটো

দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ব্যানবেইস। অবশ্য ঢাবির এত বেশি সংখ্যক অধ্যাপক থাকা ও প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক রয়েছেন ৮৪১ জন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা ৮৭১ জন। সে হিসেবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপকের সংখ্যা ৩০ জন বেশি। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট ১ হাজার ৩২ জন অধ্যাপক খন্ডকালীনভাবে অধ্যাপনা করছেন; যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন চাকরিতে রয়েছেন।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনিতেই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে অধ্যাপকের সংখ্যা কম হওয়া উচ্চশিক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ। মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের জন্য মানসম্মত শিক্ষক জরুরি। এক্ষত্রে অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক যোগ্যতার অন্যতম ক্যাটাগরি। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারেরও নজর দেওয়া উচিত।

এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা যখন এত কম, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঢাবিতে প্রভাষক হওয়া কঠিন। সেই তুলনায় অধ্যাপক হওয়া সহজ। কেউ একবার প্রভাষক পদে চাকরি পেলে তিন বছরের মাথায় তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে যান। যোগ্যতা, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চার সুনাম, ভালো মানের গবেষণা ও প্রকাশনা না থাকার পরও অনেকে অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছেন। এতে কেবল সংখ্যাই বৃদ্ধি পাচ্ছে না। মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান মেলাতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তার মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি অধ্যাপক তৈরি করতে চান না। কেননা অধ্যাপকদের বেতন অনেক বেশি। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হওয়াটাকে দেখা হয় বেতন বৃদ্ধি হিসেবে।

আরো পড়ুন: ক্ষুদ্র ও কমিউনিটি ব্যবসায় ঝুঁকছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য রিস্ট্র্যাকচারিং নামে একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ পদ না থাকলেও যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে লেকচারার পদটিকে অধ্যাপক পদ বানিয়ে ফেলতে পারে। এর ফলে ঢাবিতে অধ্যাপকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবে এ যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের এখানে অধ্যাপক পদে প্রমোশন পেয়ে শিক্ষকরা সেটিকে উদযাপন করেন না। কেননা আমাদের দেশে যে কেউ অধ্যাপক হয়ে যান।

ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, আমাদের দেশে বয়স দিয়ে শিক্ষকের যোগ্যতা পরিমাপ করা হয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিক্ষকের যোগ্যতা মাপা হয় গবেষণা দিয়ে, অর্জন দিয়ে, জার্নাল দিয়ে। সেজন্য আমাদের দেশের শিক্ষকরা অধ্যাপক পদটিকে প্রমোশন হিসেবে দেখেন। প্রমোশন হলে তার কিছু বেতন বৃদ্ধি পায়। সেজন্য শিক্ষকরা যেমন-তেমন গবেষণা করে অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছেন।

ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাবিতে মোট শিক্ষক রয়েছেন দুই হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক ৮৭১ জন, সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন ৪২৬ জন, সহকারী অধ্যাপক ৬১০, প্রভাষক ৩২৭ এবং অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন ১৮৭ জন।

দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক চার হাজার ৫২৮ জন, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৬৫৭ জন, সহকারী অধ্যাপক পাঁচ হাজার ২৮৩ জন, প্রভাষক দুই হাজার ৬৭২ জন এবং অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন ২৮৬ জন। 

অন্যদিকে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৭৭ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক ৮৪১ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৮৪৫ জন, সহকারী অধ্যাপক দুই হাজার ৯৫৪, প্রভাষক ছয় হাজার ৯১০ জন, অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন ১৬২ জন। খণ্ডকালীন অধ্যাপক রয়েছেন এক হাজার ৩২ জন, খণ্ডকালীন সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা ৫০৯, সহকারী অধ্যাপক ৬৪৬, প্রভাষক এক হাজার ২৬৪ এবং খণ্ডকালীন অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন ১১৪ জন।


সর্বশেষ সংবাদ